------------------------------------------------------
।। কথামুখ।।
------------------------------------------------
ভূত আছে। না, ভূত নেই।
কোনওটাই জোর গলায় কেউ সাধারণত বলতে পারে না।
কারও কারও দাবি,' আমি ভূত দেখেছি।' কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে দেখিয়ে দেন, ভূত মনের ভ্রম!
যাই হোক। এই দ্বন্দ্বদোলা আছে,থাকবে। সাহিত্যেও ভূত নানা ভাবে ধরা দিয়েছে। ভৌতিক, অলৌকিক বা অদ্ভুতুড়ে মনস্তাত্বিক গল্প, এখনও চুম্বকের মত টানে।
তাই এবার 'স্ফুলিঙ্গ' হাজির হলো সাইকোথ্রিলার আর ভূতের গল্প নিয়ে। আশা করি এই স্বাদবদল ভাল লাগবে।
সাইকোথ্রিলার
গল্পে যেমন হয়
রুমেলা দাস
(১)
‘ প্লিজ প্লিজ প্লিজ সৌতি একবার যা না মা। বাইরে গিয়ে জাস্ট মগটা উল্টে দিয়ে আসবি। তাহলেই হবে। ও আপনা আপনি বেরিয়ে যাবে। আমি কতবার গেলাম। যাচ্ছে না কিছুতে। এদিকে আমার কাজের যে দেরি হয়ে যাচ্ছে। জামাকাপড়গুলো ভেজানো আছে। প্লিজ প্লিজ প্লিজ তোকে ভ্যানিলা আইসক্রিম খাওয়াব। আর বিরিয়ানি। এই সানডে পাক্কা। যা না। সোনা মা আমার।'
‘উফঃ কী যে জ্বালাস না। অফিসের কাজ নিয়ে একে পাগল হয়ে আছি। লকডাউন হলে হবে কী। অফিসের থেকে শালা বাড়িতে বেশি কাজ দিচ্ছে মালগুলো। ধুস... সুমনার মত আমিও বাড়ি ফিরে গেলে ভাল করতাম। কেন যে মরতে পড়ে থাকলাম। তারপর তোর এই ঢং। এত দাপিয়ে বেড়াস আর ওইটুকু একটা প্রাণীকে ভয়?’
‘ওইটুকু নয় রে, সিরিয়াসলি বেশ বড়। মানে অত বড় কুচকুচে কালো টিকটিকি আমি জীবনেও দেখিনি। কোথা থেকে মগের মধ্যে পড়ে আছে। একটুও ছটফট করছে না। পুরো স্থির। মরে গেছে কি? দেখ না মনা একটু গিয়ে।‘
‘পারিসও বটে। বড় না ছাই। তোর কাছে সবই একেকটা প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী। ইয়া বড়। ঘরের পুচকে টিকটিকিটা দেখেও তো ফড়িংয়ের মত লাফাস।‘
‘যা না মা। আমি বারান্দায় জামাকাপড় কাচতে যেতে পারছি না।‘ দীপ্তি সৌতির কাঁধ ধরে আরও একবার ঝাঁকায়।
বিরক্তি মুখ নিয়ে ল্যাপটপে নিজের কাজটাকে সামান্য পজ করে সৌতি বারান্দার দিকে যায়।
এই হয়েছে এক বিপত্তি।
দু’দিন অন্তর অন্তর একবার সুমনা, একবার সৌতিকে ধরে প্রায় নাছোড়বান্দা অবস্থা করে দেয় দীপ্তি। ওরাও কখনও বিরক্তি মুখ নিয়ে, কখনও ভয়ানক রাগ দেখাতে দেখাতে নিরুপায় হয়ে দীপ্তির সমস্যার টেম্পোরারি সমাধান করে। কিন্তু কিছুদিন পরেই বিপদটা আবার অন্যরকমভাবে এসে সামনে দাঁড়ায়।
সৌতি জোরে জোরে পা ফেলে খানিক গজগজ করতে করতে এগোয়। আর এদিকে দীপ্তিও নিজেকে সেফ রাখতে সৌতি ঘর থেকে দু’চার পা বেরোতেই ওদের বেডরুমের দরজাটা ভেজিয়ে দেয়। মানেটা হল এই, বাইরে যা হওয়ার হয়ে যাক। ওই বিশেষ প্রাণীটা ঘরে না ঢুকলেই হল। অন্ততঃ দীপ্তি নিজে তো নিরাপদ থাকবে।
মিনিট পাঁচেক কেটে যায়। বাইরে থেকে খুটখাট, ধুপধাপ আওয়াজ শোনা যায়। সৌতি ঘরে আসে না। ঘর থেকে ওকে ডেকেও সারা পায় না দীপ্তি।
টিকটিকিটা মগ থেকে বেরোচ্ছে না নাকি?
ভাবতে না ভাবতেই একটা দড়াম করে আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে ওদের ঘরের ভেজানো দরজাটা হাট হয়ে খুলে যায়। ‘আ আআ....’ চিৎকার করে দৌড়ে ঢুকে আসে সৌতি। ভয়ে, আতঙ্কে বান্ধবীর চেঁচামেচিতে দীপ্তি ততক্ষণে খাটের ওপর দাঁড়িয়ে। দুজনেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। কিন্তু এরপর যে দৃশ্যটা দেখা গেল তাতে কেউ যদি চব্বিশ-পঁচিশ বছরের দুটো মেয়ের ছেলেমানুষি ধরে নিয়েও থাকেন তারা বিষয়টা একটু অন্যভাবে দেখবেন। কারণ সৌতি ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ওর পেছন দিকটা খেয়াল করলে দেখা যাবে একটা বেশ বড় মাপের কালো টিকটিকি মুখে কেমন যেন এক অদ্ভুত আওয়াজ করতে করতে তেড়ে আসছে সৌতিকে।
ওটার হাত থেকে বাঁচতে সৌতি খাটে উঠে বসে হাঁফাতে থাকে। টিকটিকিটা একইরকম আওয়াজ করতে করতে খাটের কাছে এগিয়ে এসে কিছুক্ষণ থামে। ঠেলে ওঠা চোখ দিয়ে যেন গিলে খায় ওদের দুজনকে। তারপর কী যেন মনে হতে সরসর করে সোজা ঢুকে যায় খাটের তলায়।
(২)
‘মরেই যাব। এবার কী হবে সৌতি?’
‘কি আবার হবে?’
‘ওটা যে খাটের তলায় ঢুকে গেল।‘
‘গেল তো গেল। টিকটিকি তো খাটের তলাতেই থাকে। লুকানো জায়গায়।‘
‘না... মানে আমি তো বিছানা থেকে নামতেই পারব না। রান্নাঘরেও যেতে পারব না। যদি বেরিয়ে এসে কামড়ে দেয়? কি হবে রে?’
‘টিকটিকি কামড়ে দেবে? বাপের জন্মে শুনিনি।‘ মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসতে থাকে সৌতি।
‘খুব যে হাসছিস? আমি না-হয় টিকটিকি দেখলে হার্ট ফেল করি। কিন্তু একটু আগে যে তুই দৌড় মারলি। ঐরকম চেঁচালি? তার বেলা?’
‘যেমন তুই তেমন তোর বজ্জাত টিকটিকি। মাইরি বলছি, ওটার আকারটা নো-ডাউট বড়। একটা গা ঘিনঘিনে ব্যাপার আছে। ইশ কী কালো, গুটিগুটি। বারান্দার ঝুলঝাড়ু দিয়ে ওটাকে সরাতে গেলাম। কিছুতেই মগটা থেকে উঠছিল না। ঠেললাম। উঠলই না। তারপর মগটা যখন ফেলে দিই সোজা ঘুরে আমার দিকে তেড়ে আসে। আমি দরজা ঠেলে...’
‘সাধে কী আমি ভয় পাই বল? আমি তো মনে করি টিকটিকির থেকে ভয়ানক জীব পৃথিবীতে আর একটাও নেই।‘
‘যা ভাগ... অনেক পরিশ্রম করিয়েছিস। এবার চল... একটু চা করে নিয়ে আয় তো। অফিসের কাজটা ফিনিশ করতে হবে। নাহলে শৈলেনদা গর্দান দেবে।‘
‘না... মানে বলছিলাম... আজ...
‘দীপ্তি এবার সবশুদ্ধু তোকে ধরে খাটের তলায় ঢুকিয়ে দেব। মজা বুঝবি তখন। পালা...’
দীপ্তিকে রান্নাঘরে পাঠালেও সৌতির মনে একটা খটকা লাগে।
টিকটিকিটা হটাৎ ওর দিকে অভাবে তেড়ে এল কেন?
যদি ওটা মানুষ দেখে ভয় পেয়েও থাকে তাহলে খাটের তলায় ঢোকার আগে কিছুক্ষণ থেমে ....
রাম... রাম... রাম... কী কান্ড! এসব কি ভাবছে ও? ম্যানিয়াক উইমেনের রুমমেট হলে এমনই হয়। শেষে কিনা টিকটিকি নিয়ে ভাবতে বসল?
নিজের মাথাতেই হাত দিয়ে টোকা মেরে ল্যাপটপে ঘাড় গোঁজে সৌতি। আর ঠিক তখনই খাটের তলা থেকে ঘরঘরে ভারী অস্বস্তিকর শব্দে ডেকে ওঠে টিকটিকিটা....
টিক... টিক... টিকটিক... টিক...
(৩)
‘আর বলিস না। আজ বিকেলবেলা যা কীর্তি করেছে আমাদের দীপ্তি। এখন নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। ...হ্যাঁ...
আর কী...
টিকটিকি...
নতুন...
ওটা আবার আমি ঘরে ঢুকিয়েছি... হি হি হি...
যাক তুই কখন নামছিস কলকাতা?
ট্রেনে কেমন ভিড় রে?
লেট আছে.... সন্ধে হয়ে যাবে... কী শুনতে পাচ্ছি না... হ্যালো... হ্যালো....’
শিট ফোনটা কেটে গেল! নেটওয়ার্কের সমস্যা হয়ত।
সুমনার ফোনটা কেটে যেতে ঘড়ি দেখে সৌতি। বেশ রাত হয়েছে। ন’টা নাগাদ ডিনার করলেও কিছুতেই ঘুম আসছিল না। তাই একটু আগে ফোন করেছিল সুমনাকে।
হ্যাঁ সুমনা, সৌতি আর দীপ্তি ওরা তিনজনে পুণেতে একটা রুম শেয়ার করে থাকে। তবে ঠিক একটা রুম নয়। দুটো বড় রুম। আর কিচেন, বাথরুম, সঙ্গে বেশ বড়সড় একটা বারান্দা। ভাড়াটা ভাগাভাগি করে দেয়। তিনজনেরই কলকাতায় বাড়ি। তবে আলাপটা প্রথম হয় এখানে পুণেতে, চাকরি করতে এসেই। সুমনা স্কুলে ফিজিক্স পড়ায়, সৌতি আইটিতে, আর দীপ্তি কোন এক কনসালটেন্ট এজেন্সিতে। সৌতি আর সুমনা একবছর আগে পুণে এসেছে। একমাত্র দীপ্তির এই প্রথম ঘর ছাড়ার অভিজ্ঞতা। ঘরে এসে যখন তিনজনের পরিচয় হয় তখন দীপ্তির অযথা টিকটিকি ভীতি দেখে বাকি দুজন তেমন একটা পাত্তা দেয়নি। ভেবেছিল বাড়ি ছেড়ে থাকার একটা আড়ষ্টতা থেকেই এসব মামুলি ভয়। কিন্তু যতদিন যেতে থাকে। ততই বাড়তে থাকে নিত্য নতুন আজগুবি আতঙ্ক। বাড়ে বাকি বান্ধবীদের নিজের কাছে আটকে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা। মনে আছে একদিন তো সুমনাকে স্কুল পর্যন্ত যেতে দেয়নি ঘরের দেওয়ালে দুটো টিকটিকি মারামারি করছিল বলে।
ভাবলেই রাগ ধরছে সৌতির। করোনার জন্য সব বন্ধ। তবে সপ্তাহে একদিন করে ওদের অফিস খুলছে। তাই বাড়ি ফিরতে পারছে না ও। সুমনার স্কুল ছুটি ডিক্লেয়ার করে দিয়েছে আগামী ছ’মাস। তাই ও পালিয়েছে। এখন তো সৌতির মনে হচ্ছে বাড়িতে গেলেই সবচেয়ে ভাল হত। এই দীপ্তির সঙ্গে থাকলে ও বেশিদিন আর সুস্থ থাকবে না। এর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে করোনা হওয়া ঢের ভাল।
গলাটা শুকিয়ে আসছে। একটু জল খেতে হবে। বেডরুম থেকে উঠে ড্রয়িংরুমে আলোটা জ্বালাতে যাবে হটাৎ মনে হয় কে যেন সরে গেল... সোফাটার ওপর থেকে।
শিরশিরে স্রোত নেমে যায় শিরদাঁড়া বেয়ে।
কোনও মানুষ? চোর নাকি?
মুহূর্তে সুইচটা জ্বালিয়ে দেয় সৌতি। এপাশ ওপাশ ঘুরে দেখে। নাঃ কেউ কোত্থাও নেই। রান্নাঘরের জানলা, ঘরে ঢোকার দরজাটাও ভাল মত বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে?
কে ছিল?
এতটা ভুল হল?
বেশ মনে হল কেউ যেন সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল...
আর তারপর সৌতি বুঝে ওঠার আগেই কোথায় যেন মিলিয়ে গেল...
ফ্রিজ খুলে গলাটা জলে ভিজিয়ে নিল ও। বোতলটা ঢাকনা বন্ধ করে জায়গামত রাখতে রাখতে একটা বিশ্রী গন্ধ পেল। পচা, দুর্গন্ধ... একটু আগে তো ছিল না!
তাহলে কি সেই টিকটিকিটা? মরে গেছে?
হতেই পারে। ওটা খাটের তলায় ঢোকার পর থেকে বাইরেও তো বেরোয় নি।
এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সৌতি শোওয়ার ঘরে পা দিতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে সেই টিকটিকিটা আরও ভয়ঙ্কর আরও ঘড়ঘড়ে শব্দে ডেকে ওঠে...
টিক...টিক... টিকটিক... টিক
(৪)
‘দু’দিন হয়ে গেল সুমনার কোনও খবর নেই। কতবার যে ওর দাদা ফোন করেছে। তোর ফোনটার কি হয়েছে? তোকেও করেছিল। তোর ফোন নাকি পাওয়া যাচ্ছে না?’
‘তাই? আমার ফোন তো খোলাই ছিল। সত্যি সৌতি মেয়েটা যে কোথায় গেল?’
‘আমাকে পরশু রাতেই ফোন করেছিল। তোর আর তোর টিকটিকির গল্প বলছিলাম। সন্ধেতে ট্রেন কলকাতায় ঢোকার কথা। কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল? মেয়েটা কি হাওয়ায় উড়ে যাবে?’
‘পুলিশে নিশ্চয়ই ওদের বাড়িতে খুব....’
‘তা তো করবেই। ওর দাদা বলছিল পুলিশ আমাদেরও সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। তারওপর তোর ফোনটা পায়নি বলে নানা কথা জিজ্ঞেস করছিল। ওরা ভাবছে সুমনা ট্রেনে চেপেছিল নাকি সেটাই সন্দেহ হয়।‘
‘ছাড় তো। আমরা কি করব? আমাদের সঙ্গে আলাপ-ই বা ক’দিন?’
‘শোন দীপ্তি তোর এই ওভার কনফিডেন্স আমার ভাললাগে না। এক টিকটিকি ছাড়া তোর কোনও কিছুতেই গ্রাহ্য নেই।‘
‘কি করব বল, ওটা যে আমার ছোট থেকে...’
‘থাম একটা কথা শোন। ড্রয়িংরুমটায় কোনও স্মেল পাচ্ছিস?’
‘কই নাতো?’
‘খেয়াল করিস। একটা চাপা দুর্গন্ধ ওদিকটা থেকে মাঝে মাঝেই আমার নাকে আসছে। একদিন ঘরটা পরিষ্কার করতে হবে।‘
‘কী লাভ?’
‘মানে?’
‘মানে সুমনাও চলে গেল। আবার তুইও যাচ্ছিস।‘
‘হ্যাঁ বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে। অফিসও টোটাল বন্ধ হয়ে যাবে বলছে। এখানে থেকে কি করব? আমি আমার যা কিছু টুকটাক আছে নিয়েই চলে যাব এখানের ভাড়া গুনব কেন?’
‘ভাল করে ভেবে দেখেছিস তো? আবার যদি এখানে ফিরে আসতে হয়?’
‘ওমা সে আবার কি কথা? করোনা নির্মূল হলে, ভ্যাকসিন বেরোলে আবার তো অফিস ফিরে আসতেই হবে। তখন নতুন করে ঘর খুঁজে নেব। টেনশন কি? পুণেতে কি ঘরের অভাব? তুই যাবি না?’
‘কোথায়?’
‘কোথায় আবার? বাড়ি!’
‘আমার আবার বাড়ি?’ সৌতি দেখে দীপ্তির মুখটা গম্ভীর। এই ক’বছরে বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে ও এমন আচরণ করে। কেন কে জানে!
আর কথা না বাড়িয়ে সৌতি ব্যাগ গুছাতে থাকে। দেরি করলে তো চলবে না। কাল সকালেই তো ওর কলকাতার ফ্লাইট। হ্যাঁ সৌতি ওর বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। কলকাতায়। করোনা পরিস্থিতিতে দোকান-পাঠ, মাল্টিপ্লেক্স, এমনকি অফিসটাও পুরোপুরি বন্ধ হল। একা একা বাইরে পড়ে না থেকে বেটার ঘরে ফিরে যাওয়া। অন্ততঃ বাড়ির মানুষের সঙ্গে কথা বলে তো কাটানো যাবে। তারওপর সুমনার ঘটনাটা....
মেয়েটা কি কারুর সঙ্গে পালিয়ে গেল?
তাই বা কিকরে হয়? ও বাড়ি যাওয়ার জন্য যেমন খুশি ছিল। তাতে তো সেরকম কোনও ইঙ্গিত পায়নি। একসঙ্গে এতগুলো টাইম স্পেন্ড করেছে। ওর মনে কিছু আছে বলেও জানতে পারেনি।
উঁহু, আবার সেই গন্ধটা...
ঘাড় ঘোরাতেই দেখে দীপ্তি নিজের বালিশে শুয়ে এরমধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কি মেয়ে রে বাবা? এই তো কথা বলছিল! এই ঘুমিয়ে পড়ল?
বাথরুম থেকে টপাটপ নিজের জিনিসগুলো গুছোতে গুছোতে হটাৎ ফোনটা বেজে ওঠে। একটা আননোন নাম্বার। রাত তো বেশ ভালোই হয়েছে। এত রাতে আননোন নাম্বার...! প্লেন ক্যানসেল নয়তো?
ফোনটা কানে ধরে সৌতি। ওর সারা শরীরে কেঁপে ওঠে। কপালে জমতে থাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আড়ষ্ট হয়ে ওঠে হাত পায়ের সমস্তটা। কথা বলতে চায়। কিন্তু একটা শব্দও গলা দিয়ে বের করতে পারে না। চিৎকার করে ওঠে,
দীপ্তি...
(৫)
কাল সারারাত চোখে পাতায় এক করতে পারেনি সৌতি। কিভাবেই বা পারবে? ঐরকম একটা খবর পাওয়ার পর। চিৎকার করে ডেকেছিল দীপ্তিকে। তারপর খুব কেঁদেছিল।
সুমনা আর নেই। এটা যেন মানতেই পারছে না। সৌভিক বলে সুমনার একটা ক্লোজ ফ্রেন্ড সৌতিকে ফোন করে জানায়। কোথা থেকে যে ছেলেটা সৌতির নাম্বারটা পেয়েছে। সেটা অবশ্য জানে না। জানার মধ্যে এটা জানে সুমনার লাশটা পাওয়া গেছে স্টেশনেরই কাছাকাছি একটা জায়গায়। থেঁতলানো শরীরটাকে দেখে চেনার উপায় ছিল না। নিখোঁজ ডায়েরি থাকায় ওই এলাকার পুলিশ সুমনার বাড়ির লোককে ডাকলে ওরা বাকি জিনিসপত্রে সুমনাকে আইডেন্টিফাই করে নেয়। ছেলেটা আরও রাতের দিকে সুমনার বডির ঝাপসা একটা ভিডিও পাঠায় সৌতির ফোনে।
উফঃ কী ভয়ঙ্কর!
আচ্ছা ছেলেটা কোনও ফেক ভিডিও তো পাঠাতে পারে?
‘ম্যাম... এয়ার হোস্টেসের গলার আওয়াজে চোখ খুলে তাকায় সৌতি। মেয়েটা ট্রে করে চা, কফি, স্ন্যাকস নিয়ে এসেছে। যতক্ষণ না বাড়ি যায় গলা দিয়ে কিচ্ছু নামবে না ওর। ও মাথা দুলিয়ে না করে দেয়।
কাঁচের জানলার ওপার দিকে মেঘ, রোদের লুকোচুরি খেলা দেখতে থাকে। এখন বাজে সকাল ৬টা৩৫মত। এতক্ষণে তো দিনের ঝকঝকে আলো ফুটে যাওয়ার কথা। কিন্তু একদলা মেঘ সূর্যের সোনালী আলোকে আটকে রেখেছে। যেন তারা কিছুতেই চায় না আলো ছড়িয়ে যাক পৃথিবীর বুকে। যেন তারা চায় না দিগন্ত জুড়ে একঝাঁক রঙিন স্বপ্নের শুরু হোক। ঠায় মেঘের দিকে তাকাতে তাকাতে আচমকা সৌতি আবিষ্কার করে ওর জানলার পাশে পাশে যে মেঘটা উড়ে উড়ে ভেসে আসছে। সেটা যেন... সেটা যেন... একটা বিশেষ বিশেষ আকৃতির....
সৌতির গা গুলিয়ে ওঠে। পেট মুচড়ে বমি বেরিয়ে আসতে চায় মুখ দিয়ে। শারীরিক টালমাটালের মধ্যেই তার মনে পড়ে যায় সবটা...
চোখ বুজিয়ে নেয় ও। একহাতে মুখ চেপে অন্যহাতের আঙুলে চাপ দিয়ে প্লেনের মাথার ওপরের সতর্কীকরণ সুইচটা টিপে ধরে সজোরে।
চোখ জুড়ে নেমে আসে একটা কালো পর্দা...।
(৬)
‘আপনি ঠিক আছেন তো?’
‘হুম’ চোখটা সামান্য খুলেই আবার বন্ধ করে নেয় সৌতি। ওর মুখের ওপর ঝুঁকে রয়েছেন একজন ভদ্রমহিলা। উনি বাঙালি। পাশেই বসেছিলেন। সেটা ও আগেই লক্ষ করেছে। হয়ত এই প্যান্ডামিকে কলকাতা ফিরে যাচ্ছেন।
হোস্টেসগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করছিল। ওকে অসুস্থ দেখে মুখে চোখে জল ছিটিয়েছে। জামাটা ভেজা। আর মিনিট পনেরোর মধ্যে প্লেন ল্যান্ড করবে বলে অ্যানাউন্স হচ্ছে। সিট বেল্টটা বেঁধে দিয়ে ওকে একটা ওষুধ দেয় হোস্টেস মেয়েটা। সৌতি সেটা মুখে পুরে সামান্য ঘাড় ঘোরায় জানলার দিকে।
আকাশটা এখনও মেঘলা।
আবারও চোখ বুজিয়ে নেয়। সুমনার থেঁতো শরীরটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। কে অভাবে শেষ করে দিল ওকে? কিন্তু অদ্ভুতভাবে ওই ঘেঁটে যাওয়া শরীরটার মধ্যেও ওর চোখদুটো যেন সৌতির বুকটা ফালাফালা করে দিচ্ছিল।
কী নিদারুণ ভয় আর যন্ত্রণা মিলেমিশে। কিছু কি বলতে চাইছিল ও? কি?
প্লেনটা গতি বাড়িয়েছে। সামান্য দুলে উঠে নামতে শুরু করেছে মাটি ছোঁয়ার আকুলতায়। আরও আরও জোরে .... দুলে উঠেছে সব কিছু... কারা যেন নিজেদের মধ্যে কথা বলে চলেছে... খুব জোরে কি? হ্যাঁ... ওরা তো চিৎকার করছে.... পাশে বসে থাকা ভদ্রমহিলাও চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন... কিসের যেন একটা পোড়া গন্ধ নাকে আসছে..। শরীরের সব শক্তি একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে.... কি হচ্ছে ... কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না ও.... বোঝার মত অবস্থাও নেই... ফায়ার... ফায়ার বলছে কেন? গরম একটা ভাপ আর অনেক অনেক ধোঁয়া ভরে গেছে ভেতরটায়... আর সব ছাপিয়ে সৌতির নাকে আসছে একটা বিশ্রী পচা গন্ধ...
যদিও গন্ধটা ওর খুব চেনা...
(৭)
‘এই ধরণের সিম্পটম ওর কবে থেকে হয়?’
‘মানে ডঃ ব্যানার্জি এটা অনেক ছোট থেকেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমরা ওকে ফেলে রাখিনি। রেগুলার ট্রিটমেন্ট করেই গেছি। তাও যে কেন এমন?’
‘হ্যালুসিনেশন।‘
‘হ্যাঁ ডাক্তারবাবু... আমাদের মেয়েটা...’
‘আপনি মা হয়ে যদি এভাবে ভেঙে পড়েন। তাহলে তো খুব মুশকিল। সবচেয়ে আগে আমার একটা অভিযোগ আছে।‘
‘অভিযোগ?’
‘আপনারা বাবা-মা সবটা জেনে মেয়েকে বাইরে চাকরি করতে পাঠিয়েছেন কেন?’
‘আমি দিব্যি করে বলছি, মাঝে মাঝে ও খামখেয়ালি হয়ে পড়ত ঠিকই। কিন্তু ট্রিটমেন্টের পর পর স্কুল জীবন থেকেই ও একটু একটু করে স্বাভাবিক হচ্ছিল। মানে কখনও হুট করে এমন কিছু কথা বা ব্যবহার করত না যেটা আমাদের মনে সন্দেহ গড়ে তোলে। আপনাকে কি করে বোঝাব ডাক্তারবাবু আমি বা ওর মা কেউই চাইনি ও পুণে যাক। মেয়েটাই জেদ করল। আজকালকার মেয়ে একটা কিছু ভুল সিদ্ধান্ত যদি নিয়ে বসে। তাই শেষমেষ আমরাও সায় দিই...’
‘না আপনারা যাই কারণ দেখান। যদি পাঠাতেই হত আপনারা কেউ একজন মেয়ের সঙ্গে গিয়ে থাকতে পারতেন। সলিউশন তো অনেক কিছুই আছে। তাই না?’
‘তা আছে। আমরা সেটা ভেবেও ছিলাম। কিন্তু মেয়েই পুণেতে কিছুদিন থাকার পর বলল, ও নাকি রুমমেট পেয়ে গেছে। তায় বাঙালি। আমরা একটু নিশ্চিন্ত বোধ করি। মেয়েটার সঙ্গে আমরা ফোনে যোগাযোগও রাখি।'
‘আচ্ছা মিসেস বোস আরেকটা জরুরি কথা। উনি যে বারবার টিকটিকির কথা বলে চলেছেন। সজ্ঞানে, অজ্ঞানে। ওটা ঠিক কিসের কারণে বলতে পারবেন কি? এটা কি আগেও হয়েছে? না সদ্য এই ধরণের হ্যালুসিনেশন দেখছে।‘
‘আসলে... ডাক্তারবাবু.... এটার একটা পাস্ট ...'
‘বলুন মিসেস বোস। থেমে যাবেন না। আপনারা যদি চান আপনাদের মেয়েকে ভাল করতে হবে। তাহলে আমার গোড়া থেকে জানা বড্ড প্রয়োজন।‘
‘আসলে আমাদের দুই মেয়ে। যমজ। সোমা আর সৌতি। অন্যজন আজ থাকলে একই বয়সী হত। সোমা দুর্ভাগ্যবশত প্রতিবন্ধী জন্মায়। হলে হবে কি? দুই বোনে খুব ভাব ছিল। পাঁচ বছরেও সোমা দাঁড়াতে পারত না। আসলে ভয়টা ওর মধ্যেই ছিল। টিকটিকির। আমরাও একটু একটু করে মানিয়ে নিচ্ছিলাম। এরকম একটা সময়েই বিপদটা ঘটে। ওদের দুই বোনকে আয়ার কাছে রেখে আমরা একদিন একটা জরুরি কাজে বেরিয়েছিলাম। মাঝরাস্তায় ফোন আসে সোমা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি ফিরি। দেখি সোমা চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। চোখ খোলা। মুখ দিয়ে সামান্য সাদা ফেনা। আর ওর থেকে দু’মিনিটের ছোট বোন কি একটাকে যেন পা দিয়ে পিষে ফেলছে। আয়া আমাদের যা বলেছিল তাতে জানতে পারি, সোমা শুয়েই ছিল। কোথা থেকে হটাৎ একটা টিকটিকি সোমার বুকের ওপর পড়ে। সোমার টিকটিকিতে মারাত্মক ভীতি ছিল। টিকটিকিটাও হয়ত কয়েক সেকেন্ড ভয়ে ওর গায়েই পড়েছিল। কিন্তু অঘটন যা ঘটার তখনই ঘটে যায়। কারণ আয়া সেই সময়ই বাইরে আইসক্রিম কিনতে যায়। ফিরে দেখে সৌতি ওর দিদির গা থেকে টিকটিকিকে হাত দিয়ে তুলে পিষতে শুরু করেছে। ভয় বলুন, হ্যালুসিনেশন বলুন তারপর থেকে শুরু হয়...’
‘তাহলে মিঃ আর মিসেস বোস আপনারা জানতেন এই প্রাণীটার সম্পর্কে নানান কথা গল্প সৌতি প্রায়ই বলে থাকে বা থাকত।'
‘ঠিক কথা। কয়েকমাস আগেই বলেছিল ওর একটা নতুন রুমমেট এসেছে। সৌতি আমাদের বলে দীপ্তির নাকি টিকটিকিতে ভয়। পরে ওর বাবা আমি দুজনেই দীপ্তির ফোন নাম্বার চেয়ে ওর সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু দীপ্তির তেমন কোনও অদ্ভুত ভয়, ভীতি ছিলই না। আর আজ যখন এয়ারপোর্ট থেকে ওর অসুস্থতার কথা জানিয়ে ফোন... আমাদের আর কোনও আশা...'
‘আর ওই যে আরেকটা কথা বারবার বলছিল সৌতি সুমনা বলে কার যেন মৃত্যু...’
‘ওর ফ্ল্যাটে সুমনা বলে কেউ ছিল না। আমরা রেগুলার কথা বলতাম। ভিডিও কল করতাম। এ খুব লজ্জার কথা ডাক্তারবাবু এই গন্ধ, অহেতুক আশেপাশে কাউকে বা কারুর উপস্থিতি মনে করা। কারুকে ভীতু দেখিয়ে নিজেকে সাহসী প্রতিপন্ন করা এসবই সৌতির হ্যালুসিনেশন। আমাদের মেয়েটা আর ভাল হল না ডাক্তারবাবু। একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে.... মাত্র চব্বিশ বছর বয়স। ওর বিয়ে দেব...’
‘আমি আবারও বলছি আপনারা ভেঙে পড়বেন না। আমি চেষ্টা করব। এখন ৭দিন মত সৌতিকে এই নার্সিংহোমেই রাখতে বলব... কয়েকটা ওষুধ আনিয়ে দেবেন প্লিজ।‘
(৮)
‘জানিস সবাই আমাকে পাগল বলছে। আমাকে মিথ্যে মিথ্যে এই হাসপাতালের বেডে আটকে রেখেছে। সেই... সেই তোকে যেমন বাবা-মা আদর করত আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। ঐরকম আদর এখন আমাকে করতে চায়। আমি কি বোকা ছিলাম তাই না সোমা? তখন ভাবতাম বুঝি তোকে আমার চেয়ে বেশি আদর করে আদপেই ওগুলো তো দয়া... দয়া... প্রতিবন্ধীকে কে আর ভালবাসবে বল? আমাকেও সবাই এখন দয়া করবে। চাই না... আমি দয়া চাই না.... সোমা... আমি বাঁচতে চাই তাইতো পুণে চলে গেছিলাম কাজ করতে। কিছুতেই মন বসাতে পারলাম না। তুই... তোর সেই বজ্জাত টিকটিকটি আমাকে... উফঃ... আমি নাকি পাগল? আচ্ছা তুই বল আমি কি অন্যায় করেছি? তুই কষ্ট পাচ্ছিলিস উঠতে পারতিস না হাঁটতে পারতিস না... এদিকে এদিকে... মাছের বড় পিসটা... মাংসের নরম তুলতুলে অংশটা তোর ভাগেই... আর আমি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতাম...। খুব সুযোগ এসেছিল বল। বাবা-মা বেরিয়ে গেল। আয়া মাসিকে আইসক্রিম কিনতে পাঠিয়ে তোর তুলতুলে বুকে ছেড়ে দিলাম যেটা দেখে তুই সবচেয়ে বেশি ভয় পাস...
টিকটিকি...
আর তারপর...
তোর যখন ঘাড় হেলে পড়ল... ওটাকে তুলে বেদম মারতে থাকলাম। আর আয়া মাসি বোকা হয়ে গেল। আর আমিও... দেখিস... আমি... আআ...মি এখান থেকেও ঠিক বেরিয়ে যাব...
ঠিক গল্পের মতন...
কেউ আমাকে ধরতেই পারবে না।
উফঃ সেই পচা গন্ধটা... আমি জানি তুই তুই আসিস... সোমা তোর গা থেকেই আসে গন্ধটা....
হা হা হা... আমি কেমন পা নাড়াচ্ছি। হাতও। আমি তোর মত নই...’
রুম নাম্বার ১৭থেকে ভেসে আসছিল কিছু অস্পষ্ট কথা।
খুব খেয়াল করলে নার্সিংহোমের কোনও ঘুপচি দেওয়ালের কোণ থেকে ছোট্ট একটা শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছিল হাওয়ায় হাওয়ায়...
টিক... টিক...টিক... টিকটিক...
-------------------
---------------------------------------------------------------
ভূতের গল্প
কামড়
ডাঃ কনকদীপ শর্মা
"আমি শুধু শুধু কেন যে আসলাম! না আসলেই তো পারতাম..."- চায়ের দোকানে বসে অত্যন্ত বিরক্ত সুরে বলল আলোক।
আলোকের কাঁধ চাপড়ে বীরু বলল- "আহা... কী যে বলিস! এখানের মতো মজা তোর বেঙ্গালুরুতে পাবি? বছরে তো একবারই ছুটি পাস।"
প্রসেনজিৎও মৃদু স্বরে বলল-"রাইট!"
আলোক আরো বিরক্ত হল-"দ্যাখো ভাই, আমি জানি না। বৃষ্টি যতই হোক, আমি এবার বের হবই। তোমরা সঙ্গে আসলে আসো, নইলে আমি একাই চললাম। আর আসবো না নেক্সট ইয়ার থেকে বলে দিলাম..."
অগত্যা সন্ধ্যার পর সবাই ঝমঝম বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে বের হল।
গতকাল থেকে বৃষ্টি যে শুরু হল, এখনও ধরে নি। কখনও কমছে, কখনও মুশলধারে ঝরছে। আলোক বেঙ্গালুরুতে এক বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। বছরে শুধু সাতদিনের দীপাবলির ছুটি। তখন বাড়িতে আসে৷
বাল্যবন্ধু প্রসেনজিৎ ও বীরু এখানেই গ্রামের বাড়িতে থাকে। ব্যবসা করে দু'জনেই। আর সারা বছর ধরে আলোকের অপেক্ষা করে, সে আসলেই সবাই মিলে কয়েকদিন খুব আনন্দ করে। তবে এই বছর ব্যতিক্রম। নভেম্বরের এই সময় সমাজের বৃদ্ধরাও কখনও বৃষ্টি দেখেননি। দীপাবলির দু'দিন আগে, মানে গতকাল বৃষ্টিমুখর দিনে ফ্লাইট থেকে নেমেই আলোক পড়লো মহা দুশ্চিন্তায়। "বৃষ্টি কমবে তো?"- এই ভয় পেয়ে বসলো।
বৃষ্টির জন্য গতকাল বিকালটা বসে বসে আড্ডা মেরে কাটালো তিনজন।
আজ সকাল থেকেই আলোক বলছিল-"আজকে কিন্তু আমরা ঘুরবো, যতই বৃষ্টি হোক, ফ্লাড হয়ে যাক।"
দুপুর যখন তিনটে, আলোক ছাতা নিয়ে বের হলো। পায়ে একটা রাবারের স্যান্ডেল। গন্তব্য বীরুর বাড়ি। যাবার সময় বেকারি থেকে কেক নিয়ে নিল। বেকারির বাইরে ছাতাটা রেখে ভেতরে ঢুকে একজনকে পেয়ে আলোক প্রচণ্ড উৎফুল্ল হয়ে উঠলো- "আরে আরে, রিম্পি দি, কী খবর?"
রিম্পিদিও অবাক। টকটকে লাল লিপস্টিক লাগানো ঠোঁট হাঁ হয়ে গেলো-"আলো....ক! তুই? বাহ, কবে আসলি?"
"এইতো কালকেই আসলাম"- জবাব দিল আলোক।
রিম্পিদি একটা চিকেন প্যাটিস খেতে খেতে বলল-"ফাইন, চল্ আমার সাথে।"
আলোক কেক অর্ডার করে বলল-"প্লিজ আজকে না, আরেকদিন আসবো। আজকে একটু যেতে হবে।"
রিম্পিদি হেসে বলল-"আচ্ছা ঠিক আছে, আসতে তো হবেই তোকে। কেক নিচ্ছিস যে, নজর লাগছে কিন্তু, সাবধানে খাস!"
কথাটা শুনে জোরে হেসে ফেলল আলোক।
বৃষ্টির দুপুরে বীরু ঘুমোচ্ছে। আলোকের ধাক্কা খেয়ে ধড়মড়িয়ে উঠালো সে। চোখ কচলে কচলে বলল-"হুমমমম... দাঁড়া প্রসেনজিৎকে ডাকি।"
বীরু ফোন লাগালো প্রসেনজিৎকে।
মাঝারি কেকটা সবাই মিলে সাবাড় করলো। তবে একটা পিস কাগজে প্যাক করে আলোক রেখে দিল তার পকেটে। ঘরে নিয়ে যাবে।
বীরু ও প্রসেনজিৎএর মোটেই ইচ্ছে ছিল না এমন দিনে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু অবশেষে আলোকের 'হুমকি' খেয়ে ওদের যেতে হল।
বাইরে বের হয়ে আলোকের মনে হল যেন তার ছাতাটা হালকা হালকা লাগছে। ওর ছাতার হ্যান্ডেলে CLASSIC লেখা থাকার কথা। কিন্তু তাকিয়ে দেখলো যে হ্যান্ডেলে কিছুই লেখা নেই। অন্য কারোর ছাতার সঙ্গে বদলে গেলো না তো? বেকারির বাইরে রেখেছিল ছাতাটা। বাইরে আরেকটা ছাতা ছিল। ভেতরে ছিল রিম্পিদি। এর মানে বাইরের অন্য ছাতাটা রিম্পিদির ছিল। হয়তো তার ছাতার সঙ্গে ভুল করে অদলবদল হয়ে গেছে। এমন হলে পরে ম্যানেজ করা যাবে, চিন্তার কিছু নেই।
এখন মনে হচ্ছে গভীর রাত। অথচ মাত্র সাড়ে ছয়টা। জায়গাটা ওদের ছেলেবেলার খেলার মাঠ ছিল। এখন ঘরবাড়ি হয়ে গেছে। চেনাই যায় না। আলোক বলল-"না ভাই কিছুই আগের মতো নেই। ভালো লাগছে না।"
বীরু বলল- "সত্যি। আগের মতো নেই রে। হ্যাঁ কয়েকটা জিনিস ওই সেম আছে। ওই তেঁতুলগাছটা মনে আছে?"
আলোক একটু চিন্তা করে বলল-"কোন্ তেঁতুল গাছ রে? ওই যেটার নীচে আমরা যেতে ভয় পেতাম? "
"হ্যাঁ হ্যাঁ সেটাই"- বীরু বলল-" যাবি?"
"ডেফিনিটলি যাবো!"- জানালো আলোক।
ভেতরের ছোট কাঁচা রাস্তাটা ধরলো ওরা। বৃষ্টির বেগ যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
ছোটবেলায় সেটাকে যেমন বীভৎস আর বড়ো মনে হত, এখন সেটাকে খুব সাধারণ মনে হচ্ছে। শৈশব তো এমনই৷ সাদামাটা জিনিসও অসাধারণ মনে হয়, সামান্য উঠানও মনে হয় যেন বিরাট মাঠ।
কালো ঘন তেঁতুল গাছের গোড়া দিয়ে সেই সরু নালাটা বৃষ্টির জন্য বিরাট আকার ধারণ করেছে। গম্ভীর স্রোতের শব্দে বয়ে চলেছে জলরাশি। টর্চের আলো ফেলে দেখা গেল যে একটা কলাগাছ কোত্থেকে জলে ভেসে আসছে।
নালার জল কাঁচা রাস্তায়ও উঠেছে। রাস্তায় কোন্ জায়গাটা উঁচু আর কোন্ জায়গাটা নিচু, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
প্রসেনজিৎ ভীতু নয়। তবে বীরু আর আলোকের মতো দুঃসাহসীও নয়। সে বলল-" হবে এবার ফিরে যাই, না কি?"
আলোক বলল-"একটু ওইদিকটা ঘুরে এসে যাই, চল। তারপর ব্যাক টু হোম।"
অগত্যা সবাই খরস্রোতা নালার পাশের রাস্তা দিয়ে তেঁতুল গাছের নিচ দিয়ে সাবধানে হেঁটে চলল। ভূত চতুর্দশী, তারপর বৃষ্টি। এমন অন্ধকার মনে হয় পৃথিবীতে খুব কমই নেমেছে।
হঠাৎ আলোক একটা কথা বলে উঠলো -"এই এদিকে আসবি না। রাস্তার ওই সাইড দিয়ে চল্।"
বাকি দুইজন রাস্তার অন্য পাশে সরে যাচ্ছিল। আলোক নিজেও সরে আসছিল, আর তখনই তার বাম পা পিছলে ঢুকে গেল রাস্তার মধ্যবর্তী একটা গর্তে। তলিয়ে যেতে লাগলো সে। ডান পা উপরে রাস্তার যে জায়গায় ছিল, সেই জায়গাটাও ভেঙে যাচ্ছে। দৌড়ে আলোকের পাশে এসে তার এক হাত ধরলো দুই বন্ধু। আর আলোকের আরেক হাতে ছিল ছাতা, সেই হাতগর্তের ভেতরে ঢোকানো। খুব জোরে বীরু আর প্রসেনজিৎ হাত ধরে টানতে লাগলো। কিন্তু টেনে তোলা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। আলোক প্রাণপণে চেষ্টা করছে, হঠাৎ চাপা গলায় সে বলল- " ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো।"
বীরু চীৎকার করলো-"বলিস কী? ছাড়বো কেন?
ট্রাই কর, ট্রাই কর। জোর দে আলোক। "
আলোক এবার জোরে বলল-"তোদেরকে বলছি না রে। তোরা আরো জোরে টান আমায়। আমার পায়ে কিছু একটা কামড়ে ধরে নীচে টানছে, খুব শক্তি তার। ভাই আমাকে বাঁচা, বাঁ....চা....."
অবশেষে প্রচণ্ড শক্তি লাগিয়ে যখন আলোককে উঠানো হল, তার অবস্থা খুবই দুর্বল। খুব শীঘ্রই সে জ্ঞান হারালো।
প্রায় দুই ঘন্টা পরে স্থানীয় হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলো আলোকের।
"আমি ঠিক আছি?" অস্ফুটে বলল আলোক। একটা স্যালাইন চলছে।
প্রসেনজিৎ পাশেই বসে ছিল। সে বলল-"এভরিথিং ইজ ফাইন।"
ইতিমধ্যে একজন সিস্টার একটা ইঞ্জেকশন আনতেই আলোক ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে জিজ্ঞেস করল-"কিসের ইঞ্জেকশন?"
সিস্টার বললেন যে পায়ে রক্ত বের হওয়ায় এটা নিতে হবে। টিটেনাস ইঞ্জেকশন।
দেখা গেল যে আলোকের পায়ে একটা কামড়ের দাগ। নিরীক্ষণ করে দেখা গেল যে সেটা কোনো বন্য প্রাণী বা পোকার কামড় নয়, সেটা মানুষের কামড়ের দাগ। গোলাকার, সবগুলো দাঁতের ক্ষতস্থান স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যে যে জায়গায় দাঁতের আঘাত লেগেছে, সেখানে শুকনো রক্ত লেগে রয়েছে। যথারীতি আলোক এসব দেখে বিস্মিত হল, তারপরই অজানা দুশ্চিন্তা তাকে পেয়ে বসলো। গর্ত থেকে পা বের করতে গিয়ে সমস্ত শক্তি ক্ষয় করে কাহিল আলোক আর ত্রাস সহ্য করতে পারছে না। চিন্তিত আলোককে কোনোরকমে যখন শান্ত করা যাচ্ছে না, তখন হাসপাতালের ডাক্তার এলেন।
ডাক্তার এসে বললেন-"দেখুন মিঃ আলোক, এমন কেস আগে দেখিই। হিউম্যান বাইট অঢেল দেখেছি, কিন্তু এভাবে মাটির নীচে মানুষের কামড়! অবাস্তব লাগে না? আপনার হিস্ট্রি শুনে মনে হচ্ছে কোনো পোকার কামড়, বা এই ধরুন ইঁদুর বা কাঠবিড়ালি বা সেরকম কোনো রোডেন্টেএর কামড়। অথচ এই মার্ক দেখলে স্পষ্ট বলা যায় যে কোনো মানুষ কামড়েছে। বুঝতে পারছি না। তবে আমার খুবই ইন্টারেস্টিং লাগছে এই ব্যাপারটা। আপনি যদি চান, তাহলে একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে পারি।"
আলোক তৎক্ষনাৎ বলল-"নিশ্চয়ই। স্যার আমিও খুবই টেনশনে আছি। কী ছিল মাটির নীচে, শিগগিরই জানতে চাই।"
ডাক্তার গভীরভাবে কিছুক্ষণ পরীক্ষা করলেন। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখলেন। এরপর ক্ষতস্থান থেকে তুলা দিয়ে কিছু স্যাম্পলও নিলেন।
সিস্টার এর মধ্যে টিটেনাস ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছেন আলোককে। তারপর আলোকের পায়ের ক্ষত জায়গাটা ড্রেসিং করা হল।
প্রায় ঘন্টাখানেক পর ফের আসলেন ডাক্তার। হাতে একটা রিপোর্ট। উনি এসে ঠোঁট উলটে বললেন- "বেশ কনফিউসিং কিন্তু মিঃ আলোক !"
আলোক ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
ক্ষানিকটা বিরতি নিয়ে চিন্তিত আলোক ও তার বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার আবার বললেন- " পায়ের ইঞ্জ্যুরি থেকে একটা অয়েল পাওয়া গেছে, যেটা শুধু বেকারির কনফেকশনারিতে ব্যবহার করা হয়..."
ডাক্তারের কথা শুনতে শুনতে আলোক হঠাৎ হাত বাড়িয়ে উনাকে থামতে বলল, তারপর নিজের পকেট হাতড়ে বলল-"আমার পকেটের কেকটা কোথায়? বীরু, প্রসেনজিৎ, তোরা কেকটা বের করেছিস? "
বীরু বিরক্ত হল-"ধ্যাৎ, ছাড় না কেকের কথা। স্যারের কথা শোন।"
আলোক আবার উত্তেজিত হয়ে গেল-"আর আমার ছাতা? সেটাও নিয়ে গেল! নাকি গর্তে রয়ে গেল? কোথায়?..."
বীরু ধমক দিল-"চুপ্...আর ফালতু কথা না। "
আলোক আর কিছু না বলে অন্যমনস্ক হয়ে বসে পড়লো। তার নিশ্বাস জোরে জোরে পড়ছে।
ডাক্তার আবার বললেন-"তো আমি বলছিলাম যে, একটা অয়েল পাওয়া গেছে যেটা স্পেশালি বেকারিতে ব্যবহার করা হয়। আরেকটা এভিডেন্স পেয়েছি- সামান্য প্রোটিন জাতীয় খাবার, মাংস বা ডিম হবে, সম্ভবত সেই প্রাণীটা বেকারির কোনো এগ্ বা চিকেন আইটেম খেয়েছিল। অবিশ্বাস্য বাট ফ্যাক্ট। এবার সত্যি বলছি, প্রাণীটা কোনো প্রাণী নয়, বরং মানুষ ছিল, সম্ভবত মহিলা। কারণ সেই কামড়ের দুদিকে লাল দাগ পাওয়া গেছে, সেটা যে লিপস্টিকের কেমিক্যাল তা আমি নিশ্চিত।"
সব শুনে অস্ফুটে বলল আলোক-"রিম্পি দি...!"
বীরু বলল-"কী বলছিস আলোক?"
আলোক ঢোক গিলে বলল-"জানিস, আজ আমি রিম্পিদিকে বেকারিতে দেখেছিলাম- চিকেন প্যাটিস খাচ্ছিল। আর তার ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ছিল। আরেকটা কথা, রিম্পিদির সঙ্গে আমার ছাতা ভুলে ভুলে এক্সচেঞ্জও হয়ে গেছে। "
বীরু চেচিয়ে বলল-"ইম্পসিবল!"
আলোক বুঝাতে লাগলো-"ভাই বিশ্বাস কর, আমি সত্যিই দেখেছি.. রিম্পিদি আমাকে তার বাড়িতেও ডেকেছিল। বলেছিল- আসতে তো হবেই তোকে... কিন্তু আমিই বললাম যে আজ নয়, আরেকদিন..."
বীরু এবার আরো চেচিয়ে বলল-" তোকে কী করে বুঝাবো, রিম্পদি আর নেই। মরে গেছে। স্যুইসাইড করেছে গত রবিবারে... তোকে আর বলা হয় নি, ভেবেছি আসলে জানাবো..." ।"
বীরুর হাত চেপে ধরলো আলোক। মুখে কথা নেই।
বীরু বলে চলল- " তুই হয়তো বেকারিতে ভুল করে অন্য কাওকে দেখেছিস রে। কারণ রিম্পিদিকে তুই আর কখনো দেখতে পারবি না। আগুনে পুরো শরীর জ্বলে গিয়েছিল ওর। কী আগুন লাগলো হল সেটা এখনও স্পষ্ট জানি না। ওদের পরিবার থেকে বলছে দুর্ঘটনা৷ কিন্তু এখনো খটকা রয়েছে। কারণ সেটা যে আত্মহত্যাও হতে পারে, সেটা অনেকেই বলছে। কারণ রিম্পিদির ইটিং ডিসোর্ডারটা কেউ মেনে নিতে পারতো না পরিবারে। একটা মেয়ে এক মাস ধরে সারাদিন খেতেই থাকবে, আবার এক মাস বিন্দুমাত্র না খেয়ে কাটাতে চাইবে এসব মেনে নিতে তো সবাই পারেন না। সাইকিয়াট্রিস্ট নাকি দেখানো হয়েছিলও, কিন্তু মেডিসিন খেয়ে সাময়িক ভাবে সুস্থ হয়েও আবাএ ইটিং ডিসোর্ডারের কবলে পড়লো রিম্পিদি। পরিবারের লোকের গালিগালাজ আর কত সহ্য করা যায়? যখন তখন বের হয়ে এই সেই খাওয়াদাওয়া করতো বাইরে। টাকা না থাকলে পরিচিত-অপরিচিত সবার কাছেই টাকা চাইতো। এসবের জন্য পরিবারে আরো বেশি ভর্ৎসনার পাত্রী হল সে। তারপর একদিন হঠাৎ এই অগ্নিকাণ্ড ও রিম্পিদির মৃত্যু.... তোকে ভেবেছিলাম আগেই বলবো, তারপর ভাবলাম যে থাক, তুই আসলেই... " কথা শেষ করতে পারলো না বীরু...
দ্বিতীয় দফা আলোক অজ্ঞান হয়ে পড়লে ডাক্তার তাঁর পাল্স ও হার্টবিট পেলেন না। শ্বাসপ্রশ্বাসও বন্ধ যেন। পায়ের ক্ষত থেকে এখনও রক্ত ঝরছে। এম্বুল্যান্স করে মেডিকেলে পাঠানো হল আলোককে।
ভূত চতুর্দশীর গহন অন্ধকার ভেদ করে ঠাণ্ডা বৃষ্টির ফোঁটা ধরার বুকে পড়তে থাকে ক্রমাগত।
মা
দেবাশিস সায়ন
বল হরি হরি বল ...
মায়ের চিতায় আগুন দিয়ে বুবুন অঝোরে কাঁদল।
বাবাগো মা সত্যি মরে গেল ?
হঠাৎ বুবুন দেখতে পেলো চিতার পাশে তার মা বসে আছেন আর মিটিমিটি হাসছেন...
দৌঁড়ে মার কাছে যেতে চাইলো কিন্তু বাবা বললেন, আগুন দিয়ে চিতা আর দেখতে নেই রে।
কে যেন হঠাৎ বলে উঠল,
বুবুন রে চটি পর ঠাণ্ডা লাগবে!
***
অলংকরণ -- সুজয় দাম
ও অন্তর্জাল