Sunday, August 23, 2020

স্ফুলিঙ্গ, ২য় বর্ষ, ১৭তম সংখ্যা


--------------------------------------------------

কথামুখ

ক অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। করোনাকাল জীবনের চেনা ছককে  উলটোপালটা করে দিয়েছে। 

ভাইরাসের ভয়ে জীবন থমকে গেছে।

তাই না? 

কিন্তু সৃষ্টি থামেনি। হতাশাগ্রস্ত না হয়ে লেখকরা লিখে চলেছেন। 

হতাশ হয়নি স্ফুলিঙ্গও। তাই নতুন উদ্যমে শুরু হলো পত্রিকার ওয়েব সংস্করণ। প্রতিমাসের চতুর্থ রোববার প্রকাশিত হবে পত্রিকা।

এদিকে শিগগিরিই স্ফুলিঙ্গের মুদ্রণ সংস্করণও চালু হবে। 

আজকের সংখ্যায় শুধু কবিতা। 

পাঠক প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

ভাল থাকবেন।

---------------------------------------------------------

                           ।।  কবিতা ।।




দেবাশিস চন্দের গুচ্ছ কবিতা

সঙ্গোপনে

সঙ্গোপনে কতটা পথ গেলে পরে

দূর্বাঘাসে লাগবে হাওয়া, দিনের শেষে  

ঝাউবনে আজ মত্ত ঝড় উথালপাতাল

বাউন্ডুলে সময় আগলে নিয়ে  

রাত–প্রহরীর চোখ এড়িয়ে    

সমুদ্র আজ এল ঘরে ভাসিয়ে নিতে  


বৃক্ষমন্ত

গোপন সূত্র তো ফুলের ভেতর লুকনো মধুর মতো

প্রাজ্ঞ বৃক্ষ খোঁজ দেয় না সেই চোরকাঁটা বা সুড়ঙ্গের,  

বৃক্ষ তো মহাকাশ, বৃক্ষ তো হারানো জীবনের গান, 

খবর, গোপন খবর— নদী জলে গেছে ভেসে।


প্রথমত খোঁজ নিই হারিয়ে যাওয়া নাবিকদের, 

নড়বড়ে লাইটহাউস, দিশাহীন ভাঙা কম্পাস,   

কবি যাঁরা আসবেন কবিতা পড়তে এই সমুদ্রে,

হুল্লোড় শেষে ভেসে যাবেন সাহসী সাম্পানে।


দিনের শেষে রাত্রি–গভীরে যেতে যেতে

হনন–শিঙায় ফুঁ দিতে পেরে এত আনন্দ!


নিরাশ্রয় 

ঠিকানা হারিয়ে কবি আজ অনিবার্য পথযাত্রী  

বিপর্যয়ের কানাগলিতে ভেসে যেতে যেতে

আকাশ ভরা তারা দেখায় পথ বন্ধনহীন  

গাছেদের মতো অসহায় উড়ানে খোঁজে মুক্তি,

কাটাকুটির খেলায় মেতে লোভী নু্ব্জ 

বিষয়ভোগী পিতা মাতা আত্মজনেরা

ক্রিম–কীটের মতো খুুঁড়ছে সর্বনাশ      

তারা কি জানে জেনেছে আজ

আশ্রয়হীন কবি বিষাদের ঘুড়িতে 

এঁকেছে নতুন আখ্যান অশ্রুভেজা ভিত্তিচিত্র

  

প্রলয়ের ঘূর্নিঝড়ে অন্ধ এক আশ্চর্য সময় 

অন্নপূর্ণা ভেসে গেলেও আকাশ নিরুত্তর


ফিরে আসা

দূরত্ব ভয়ে ভীত রাত্রে তোমার দূরাভাষ অভয়

সেই হাসি সেই কণ্ঠ বলে আছে আশা আছে

এতগুলো দিন এতগুলো রাত কেটে গেল 

মানুষ ধীরে ধীরে সরে গেল মানুষের থেকে

সহমর্মিতা থেকে প্রেম থেকে ভালবাসা থেকে

দিঘির তালা দেওয়া গেটে দাঁড়িয়ে দেখি 

স্থির হয়ে থাকা জলে ঝিম মেরে আছে রোদ 

বালক বালিকা—সাঁতারুর দল আটক অজানা ফাঁদে


দীর্ঘ ক্লান্ত দিন রাত জাগা উদভ্রান্ত ভ্রম মৃত্যুশোক

সেই পরিচিত ভরসা বেজে উঠল বুকের গভীরে      

মানুষ আবার ফিরে আসবেই মানুষের কাছে





অভিজিৎ চক্রবর্তী'র তিনটি কবিতা

আজ সকালে

আকাশবাণীতে ঘুম ভাঙত প্রতিদিন

সমবেত কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান

রোজ সকালে তিনটি করে নিয়মমাফিক

ঝমঝম করে উঠত মনের শরীর

না দেখা আলোর পথে পা বাড়াত দিন

পথের প্রান্তে ছিল নিরুচ্চারিত শুভ

প্রগাঢ় প্রত্যয়ে ছিল লালিত শৈশব

মানচিত্র ফেলে রেখে চলে গেছে গান

সুরহীন, ধুলায় গড়ায় তার কথার শরীর

আমাকে কাঁদিয়েছে আজ ক্যালকাটা কয়ার



না পারার কবিতা

একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম

ঘামের মতো স্বাভাবিক

মোচিত অশ্রুর মতো

একটি কবিতা লিখতে ইচ্ছে হয়

প্রবন্ধ পারঙ্গম মন

তোকে আজ একটুও ভালো লাগছে না


সন্ধ্যায়

আজ হরবোলা হতে বোলো না দোহাই

কাউকে চমকে দিতে এক্ষণে চাইছি না মোটে

দেখো, নদীতে ভেসে যাচ্ছে নিরুত্তাপ কাঠ

চিতা থেকে সটকে পালিয়েছে। সামনে মরণ।

ছায়া দিয়ে ছুঁয়ে থাকো, নিকটে এসো না






মেঘমালা দে মহন্তের দুটি কবিতা

অনন্ত এক ভাঙা উগার

যুক্তাক্ষর  ভেঙে ভেঙে 

ঢেকে রাখা পতনের শব্দটুকু

নিঃশব্দে, অন্ধকার প্রহরে

অক্লান্ত গুণে চলে- 

গ্রীষ্ম...বর্ষা... শরৎ...।


আঙুলের ফাঁকে  ফাঁকে  জমে ওঠা

ক্ষয়ের পাহাড় আর 

করতলগত শবাধার 

অপেক্ষার প্রহর মাপে-

কৈশোর...  যৌবন...  গার্হস্থ... 


আবার নতুন করে শিখতেই হয়

স্বরবর্ণের মুখস্থ যোগ-বিয়োগ

হেমন্ত শীতের শস্য শেষে 

হতচ্ছাড়া বসন্তের পালা আবার।


দিয়ুং

বাড়ি ফেরা হয়নি 

আমার যে গল্পদের

তারা এখন নিশ্চিন্তে ঘুমোয়

লংমা-র ছোট্ট একটা পাহাড়ের কোলে।

কাঠের বাক্সবন্দি শীতের কুয়াশায় 

মাটি চুইয়ে ভিজেকাঠ 

শব্দরা জেগে ওঠে, 

দিয়ুং এর কান্না বোঝাই 

রাতের অবৈধ পাথরের ট্রাকে 

পাঠায় খবর-

শুকিয়ে যাওয়া নদীটার 

একটা নতুন গল্প লেখা হোক,

ঘরে ফেরার গল্প।






অলংকরণ-- সৌজন্যে ইন্টারনেট