Monday, March 30, 2020

এই আকালে গাই দিন বদলের গান




            




             এই  আকালে গাই দিন বদলের গান


                         সুদীপ্ত চক্রবর্তী (সৌম্য)



করোনা নামক ত্রাসে নাজেহাল গোটা বিশ্ব। ঘরবন্দি আমরা সবাই, কেউ কেউ বাইরে বেরনোর চেষ্টা যদি বা করছেন, কিন্তু প্রশাসন ও ডাক্তারবাবুরা বলছেন, এই যুদ্ধের একমাত্র অস্ত্র বাড়িতে থাকা।
    আচ্ছা বেশ, বাড়িতে তো থাকছি, হয়ে গেলো বেশ ক'দিন। কিন্তু বাড়িতে থেকে  কেমন কাটছে আমাদের? আমায় যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন আমি কিন্তু বলবো বেশ কাটাচ্ছি। যদিও মনের মধ্যে সারাক্ষণ এক নাছোড় উৎকন্ঠা। তা বেশি হচ্ছে যখনই ফেসবুক, হয়াটসঅ্যাপ বা টিভিতে চোখ রাখছি, মাঝে মাঝে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি। কিন্তু এভাবে তো থাকা যায় না। তাই সব ভুলে গিয়ে বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছি গান-বাজনায়। সঙ্গে বই পড়া বা সিনেমা দেখা তো আছেই। আমরা যারা সঙ্গীতের ছাত্র আমরা কিন্তু যেকোনও পরিস্থিতিতেই আগে গান-বাজনাকে আঁকড়ে ধরি। গানই আমাদের একমাত্র হাতিয়ার।
      সেদিন শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম, যদি গুপী বাঘার ওই জুতো জোড়া পাওয়া যেতো, একবার অন্তত দেখে আসতাম আমার বেড়ে ওঠার শহর শিলচরকে, অসহায় সময় বেশি করে টানে। চোখের সামনে ভাসতে থাকে গান্ধীবাগ থেকে সেন্ট্রাল রোড কিংবা তারাপুর স্টেশন। জানতে ইচ্ছে করে কেমন আছেন সবাই। সেই রাস্তায় রাস্তায় বাঁশি বিক্রি করা রঞ্জিতদা কেমন আছেন, কেমন আছেন আমাদের দুধপাতিল গ্রামের চড়কের দল। চৈত্রের ভোলার ডাক পেয়েও তারা তো আজ ঘরবন্দি। শিব-গৌরীর নাচ ছাড়া শেষ কবে বরাক নদী চৈত্রমাস কাটিয়েছিল বলতে পারবেন কেউ?
    বরাক পার ধরে হাঁটতে হাঁটতে এসে পড়ি গড়িয়াহাটে।          চৈত্রসেলের সময় গড়িয়াহাট এখন জন-মানবহীন।   যাদবপুরে নেই কোনও হকার। সবাই দিন গুনছেন কবে সেই মুক্তির ডাক আসবে, যেদিন হল্লার রাজার মতো চিৎকার করে ছুটি ছুটি বলে বেড়িয়ে একে ওপরকে জড়িয়ে ধরবেন।
     হঠাৎ  করেই কবীর সুমনের গানের কয়েকটি লাইন মাথায় এলো -
 'আমি তোমাকে দেখছি আর ভাবছি / তুমি কোথায় রয়েছ এ-মুহূর্তে / দেখ তোমার ভাবনা নিয়ে বেলাশেষ ফেরারি দিগন্তে / বড় একলা আকাশটা, আজ তোমাকে পেয়েও নিঃসঙ্গতা তার কাটছে না।'
   সত্যি, শেষ কবে শহর কলকাতায় এমন নীল, নিঃসঙ্গ আকাশ দেখেছি জানি না। সে সব ভাবতে ভাবতেই ফিরি  গানের কাছে যেখানে বাউল শাহ আব্দুল করিম বলে উঠছেন,
  ' তত্ত্ব গান গেয়ে গেলেন যারা মরমী কবি, আমি তুলে ধরি দেশের দুঃখ দুর্দশার ছবি / বিপন্ন মানুষের দাবি করিম চায় শান্তি বিধান / মন মজালে ওরে বাউলা গান....'
   অনায়াসে মিশে যাচ্ছে বাউল তত্ত্বের সংগে আমাদের চারপাশের বাস্তব চিত্র। আমার সামনে এসে ধরা দেন দূরবিন শাহ। তাঁর পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে না-পারার কারণ দর্শাতে দর্শাতে গানের শেষ স্তবকে যখন গেয়ে ওঠেন,
   'এষার নামাজের কালে বিবি বলে চাউল ফুরাইছে / পুলা মাইয়ার কান্দন শুইন্যা কান্দে পাগল দুরবিনশা'য় / নমাজ আমার হইল না আদায় ' 
     আমার সামনে ভেসে ওঠে চারপাশের খেতে না পাওয়া মানুষের মুখ, যারা এই আকালে কোথায় আছেন, কোথায় তাদের আশ্রয়। আমরা বাড়িতে বসে রোজ ফেসবুক টাইমলাইন ভরাচ্ছি, তাতে তাদের পেট ভরছে তো?
      আমার কাছে গান-বাজনা ছাড়া আর কিছু নেই,  তাই গান নিয়ে এগোতে থাকি এই করোনা মোকাবিলার দিনগুলোয়। আসতে থাকেন কখনও জয়দেব বা চণ্ডীদাস। বুঁদ হয়ে শুনতে থাকি পদাবলি কীর্তন। কখনও রেওয়াজের ফাঁকে মজে যাই জয় দা (সরকার), সৌপ্তিক, অচিনদের সাথে ফেসবুকে আমাদের বাদ্যিবাজনা শোনাতে। আবার ফিরে যাই জর্জ বিশ্বাস কিংবা গুলজারজির কণ্ঠে  গালিবের কাছে। আসলে, আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া। এতেই মজে আছি দিব্যি। এখন সূর্যের অপেক্ষায়। জানি করোনা, লক ডাউন- এ সব  সত্য। তবে তার চেয়েও বড় সত্য--'মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে'।



                                       ------

                       




সুদীপ্ত চক্রবর্তী (সৌম্য)
                            দোহার, কলকাতা






Sunday, March 29, 2020






প্রশ্নচিহ্নে নিঃশ্বাস

বিশ্বজিৎ  ভট্টাচার্য 

রক্তলোলুপ ভবিতব্যে ক্রমশ
প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখিতে
শহরের নিঃশ্বাস।
অমানিশার করাল গ্রাসে পেণ্ডুলামের
মতো দুলছে এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্তে।
এ কোন অশনি সংকেত খেলা করছে
আমার শহরে?
শব্দের আলিঙ্গনে শুষে নেয়
তাজা রক্তাক্ত শরীর।
নির্বাক ঠোঁট আজ চিলেকোঠায়
পুরোনো হাসির সমীকরণ
খোঁজে বেড়ায়।
এখানে আকাশ স্নিগ্ধ, স্বচ্ছ তবুও
সূর্য্য উঠতে ঢের বাকি...!
অতএব...
সময় এখন ঐক্যবদ্ধের;
দৃঢ়চেতার লগ্ন হয়ে ফের
আলোর কার্নিভ্যাল সাজানোর।




                                        বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
                           তরুণ কবি ও নাট্যকর্মী,শিলচর


------------------------------------------------------------------------


পৃথিবীর বড়ই অসুখ

      রাখী সরদার

অতঃপর দেখতে পাই
দরজায় হিংস্র থাবা। কার ইশারায়
দেহের সীমান্তে এত কোটি কোটি হায়নাচোখ!

তবে কী হারানিধি আমার
হারাব তোমাকে আজ!
ওগো আমার হাড়গোড় ,
কোথায় লুকাবে বলো! যুদ্ধ সমাগত
দেহখানি হয়ে গেছে পর।

ভয়ের চাদরে মুড়ে
এঁকে যাই মৃত্যু দৃশ্য। ভুলে গেছি কথা
নেই কোনও প্রিয়জন। ভোর হ‌ওয়ার আগে
কাগজ‌ওয়ালা রোজ হাঁকে --

শোন ...শোন...শোন
পৃথিবীর বড়‌ই অসুখ,শুশ্রূষা নেই কোথাও...





                                         রাখী সর্দার
                     কবি ও লেখক, পশ্চিমবঙ্গ






                   
অলংকরণ -- ইন্টারনেট 

Saturday, March 28, 2020

লক ডাউন, প্রকৃতির ডাক ও কিছু কথা

              


          লক ডাউন, প্রকৃতির ডাক ও কিছু  কথা
                 
                                  মেঘদূত সেন

কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস গেল মাস-কুড়ি দিন থেকে বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে। দুই হাজার বিশ সালকে যেন বিষিয়ে তুলেছে। চিন দেশ থেকে তার যাত্রা শুরু তারপর প্রায় সমগ্র দেশে হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছে । বর্তমানে ইতালি বা স্পেনের পরিস্থিতি ভয়াবহ । রোজ পাঁচ শতাধিক লোক এই কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন । আমাদের দেশও এই ভাইরাস থেকে ত্রাণ পায় নি। বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশ লক ডাউন । যাতে রোগ না ছড়ায় ।তবুও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছয়শ থেকে বেশি । রোজ এই সংখ্যা বেড়েই চলছে । মৃত লোকের সংখ্যাও দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে । আতঙ্কে কাটছে প্রতি মুহূর্ত । কি জানি হাত ঠিক ভাবে ধুয়ে ঘরে ঢুকলাম তো! ভাইরাস আমার হাতে বা মুখে লাগে নি তো ! গলায় ব্যথা করছে সর্বনাশ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেলাম নাকি ।
          এদিকে  প্রধানমন্ত্রী বলেছেন উদ্বেগ না করতে । সবাই মিলে লড়তে হবে ।  দেশে খাদ্য শস্য প্রচুর পরিণামে আছে । ভয় নেই । কিন্তু কে শুনে কার কথা । নুন থেকে চুন,  চাল থেকে ডাল সবকিছু বেশি  করে  মজুত রাখতে সবাই ব্যস্ত ।
               শহর -বন্দর সবকিছু নিঝুম। গোটাকয়েক মুদিখানা ও ঔষধের দোকান ছেড়ে দিলে সব কিছুই বন্ধ ।  ব্যস্ততম সড়কে দু-চারটে গোরু অবাধে চলা ফেরা করছে ।এক দু'জন সবজান্তা ব্যক্তি 'হামসে বড়া কোন হ্যায়'  বলে বেরিয়ে পড়লে পুলিশ তাদের ঠিক ভাবে শায়েস্তা করে ভিজে বেড়াল বানিয়ে বাড়িতে পাঠাচ্ছে । ওইদিকে বিজ্ঞানের ভগবান ডাক্তার তথা চিকিৎসাকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন দেশকে করোনা মুক্ত করতে । মন্দির-মসজিদ-গির্জা সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাওয়া সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ফেবুতে একজন লিখেছেন "ঘুমোচ্ছেন ভগবান জেগে আছে বিজ্ঞান ।" একদমই তাই বিজ্ঞানের ভরসায় আমরা সবাই । আশা রাখি খুব তাড়াতাড়ি এই মরণব্যাধি থেকে বিশ্ব বেরিয়ে এসে আগের মতো জেগে উঠবে ।
            তবে এই লকডাউন আমাদের গৃহ বন্দি করে রাখলেও প্রকৃতিকে যেন মুক্ত করে দিয়েছে। শেষ কবে বসন্তে কোকিলের কুহু ডাক শুনেছিলাম ভুলে গেছি । এই লকডাউন আমাদের কোকিলের কুহুতান থেকে শুরু করে, ঘুম ভাঙানো কাকের ডাক, নিঝুম রাতে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক  আরও কত পাখির  কূজন আমাদের শুনাচ্ছে । বসন্তের নিটোল হাওয়া বইছে । পুকুরের জলে লালচে সর জমে উঠেছে । বাতাসের সংগে সূর্য ও সেই সর যেন খেলা করছে। অপরূপ দৃশ্য ।
 কৃষ্ণচূড়া চারার নবজাতক পাতায়  রোজ সকালে গিয়ে দেখতাম ধুলো জমে আছে । এখন সকালে গিয়ে দেখি  কচি পাতা সবুজ-হলুদ রঙ ধরেছে । বাতাসে তার  কচি পাতা মনানন্দে  দুলছে । বিকেলের রক্তিম সূর্য পাহাড়ের আড়ালে একটু একটু করে হারিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট ছবি দেখা যাচ্ছে । আরো কত কী!
       তবে আমরা জানি এই সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী । লক ডাউন শেষ হতেই আমরা আবার লেগে পড়ব নিজেদের কাজে । বেজে উঠবে বাইকের হর্ন থেকে ষোলো চাকা লরির হর্ন  । বাতাসে মিশে যাবে কল কারখানার কালো ধোঁয়া ।
কোথাও যেন হারিয়ে যাবে প্রকৃতির এই  নিটোল মায়ময় সৌন্দর্য ।  আমরা হয়ে উঠবো প্রকৃতিকে ধ্বংস করা নিষ্ঠুর কসাই ।
        তবে দেশ করোনা মুক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াক আমরা সবাই চাই । সুস্থ হয়ে উঠুক পরিবারের প্ৰতিজন । অভয়ে যেন সবাই চলতে পারি ভাইরাসের ভয়কে পেছনে ফেলে । তবে  ইচ্ছে হয়  প্রকৃতির এই  সৌন্দর্য যেন চিরস্থায়ী হয় । দেশ করোনা মুক্ত হোক কিন্তু হারিয়ে যেন না যায় পাখির ডাক, বিকেলের সূর্যাস্ত কিংবা কৃষ্ণচূড়ার কচি পাতার খেলা ।
হয়ত সবকিছুই সম্ভব । যদি আমরা মান ও হুঁশ সহযোগে চলতে পারি । আমরা যদি সকল ব্যস্ততা ছেড়ে গৃহবন্দি হতে পারি তবে কি প্রকৃতির রূপ বাঁচিয়ে রাখতে পারবো না ? যাতে নির্মল পরিবেশে আমরা বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে উঠতে পারে । যে ভাইরাস খালি চোখে দেখা যায় না তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারছি তবে কি পারবো না পরিবেশ বাঁচিয়ে রাখতে ?
এখনই সময় ভেবে দেখার ।
এই কুড়ি একুশ দিন আমাদের হাতের মুঠোয় ।  আমরা কি পারি না সবাই মিলে নতুন করে শুরু করতে ? করোনা মুক্ত দেশের সংগে সংগে প্রদূষণ মুক্ত দেশ গড়ে তুলতে ? যাতে আমরা সুরে সুরে মিলিয়ে গাইবো "তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে পাখির ডাকে জেগে।" আর এই শব্দগুচ্ছ বাস্তবে ভেসে উঠবে। 





মেঘদূত  সেন
 সম্পাদক 'আহেলী' পত্রিকা, শিলচর।


অলংকরণ -- ইন্টারনেট 





Tuesday, March 24, 2020




                             ক রো না  ভা ই রা স



                                প্রতিভা সরকার


প্রকৃতির প্রতিশোধ, মানুষের পাপের ফল এইসব ন্যাকাবোকা কথায় বিশ্বাস নেই। অতো ভাবারও সময় পাইনা, অফিস, বন্ধু, মস্তি আর পাওলি আমার সময় খেয়ে নেয়। আর নেশা এয়ারগানের। টুকটাক মারতেই থাকি। শামুক থেকে কাক। আর বেড়াল কুকুর। কারণ পাওলি ওদের দুচোখে দেখতে পারে না। ভয় পায়, নোংরা বলে আতঙ্কও।


করোনা লকআউটে চারদিক ফাঁকা লাগে। কেউ নেই। সারাদিন আর কাঁহাতক ফোনে কথা আর সিনেমা দেখা। এয়ার গান নিয়ে বারান্দায় দাঁড়াই। দেখি কুকুর বেড়াল ঘোরে ফাঁকা রাস্তায়। মানুষ নেই একটাও। এই সুযোগ। দমাদ্দম গুলি ছুঁড়ি। কোনটার পায়ে লাগে, কোনটার কানে। একটা বেড়ালের কোথায় কিভাবে লেগেছে জানি না, সেটা ডাস্টবিনে কি শুঁকছিল। সেখানেই শুয়ে রইল। ব্যাটা মরে গেল নাকি ?  সবার দরজা জানালা বন্ধ এই বাঁচোয়া। তবু তো নীচের এনিম্যাল লাভার আন্টি সন্দেহের চোখ নিয়ে বেরিয়ে এল। আমায় জরিপ করলে কি হবে, এয়ারগান ততক্ষণ শুইয়ে দিয়েছি বারান্দায়।

হঠাত  সামনের দেবদারু গাছের কাক কলোনীতে কী সাড়া পড়ে গেল। দলে দলে উড়ে এসে চারপাশ অন্ধকার করে দিল। কেউ রেলিং ছুঁয়ে ডানা ঝাপটায়, কেউ আমার মাথার ওপর ঘুরে যায়। একটা তো দারুণ জোরে ঠুকরে দিল। আমি গুলি ছোঁড়ার চান্সই পাচ্ছি না, এতো কাক একসঙ্গে।


দড়াম করে দরজা বন্ধ করেই পাওলিকে ভিডিও কল লাগালাম। সে হেসে গড়িয়ে পড়ে,

-  ওকি তোমার কাঁধের ওপর, মাথার পেছনে সবুজ রঙের স্পাইক কেনো। গোল মুখ, ঠিক যেন করোনা ভাইরাস একটি।

সে হাসতেই থাকে। জিজ্ঞাসা করতে ভুলে যায় আমি এতো হাঁপাচ্ছি কেন।

আমি সভয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াই। দেখি সবুজ দেবদারু পাতা কাঁধে, একটি মাথার ওপরে। কলারে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর একটি। আমার গোল মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।
সত্যিই নিজেকে দেখায় যেন স্পাইকওয়ালা একটি জ্যান্ত করোনা ভাইরাস।











প্রতিভা সরকার
 অধ্যাপিকা, সমাজকর্মী ও লেখক
কলকাতা


Monday, March 23, 2020




অনুবাদ-- শামীম আহমেদ


কোভিড-১৯

মার্গারেট রান্ডাল
--------------------
মৃতের সংখ্যা যখন আশা করা হচ্ছে
লক্ষ লক্ষ হবে
সম্ভাবনা রয়েছে
তুমি ভালবাস এমন কারুরও মৃত্যু হবে।
অতীতের প্লেগের মত মহামারি আবার দেখা দেবে
এবং আমরা ঠেলাধাক্কা শুরু করব
নিরাপদ থাকতে,
মানসিক ভারসাম্য ধরে রেখে
অন্যদের পাশে দাঁড়াতে,
পড়শিদের সাহায্য করতে,
কিনব ওসবই যা আমাদের দরকার
ভয় তাড়াতে খালি হতে থাকা
দোকানের তাক থেকে।
আমাদের ফেসমাস্ক শেয়ার করতে দাও
চিনাদের মত
এবং আমাদের হাতগুলো ধুয়ে ফেলি
মৌন প্রার্থনায়।
এসো ব্যালকনি থেকে গান গাই
কল্পনা এবং বাস্তবের
ইতালিয়ানদের মত
দেশব্যাপী লকডাউনে।
এস একে অন্যের প্রতি দয়াবান
এবং সংগঠিত হই
সেসবের প্রতিকার ও সমাধান খুঁজতে
দায়িত্বহীন নেতারা যেসব ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন।
যদি সেটা বড় হয়,
আমাদের বেরিয়ে আসতে দাও
সম্মানের সাথে, যদি একটি মহড়াই হয়
আমরা শেষ অবধি শান্তিতে থাকার সংকল্প নিই।





মার্গারেট রান্ডাল (জন্ম ৬ ডিসেম্বর ১৯৩৬, নিউইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) আমেরিকান বংশোদ্ভূত নারীবাদী সাহিত্যিক, ফটোগ্রাফার, সমাজকর্মী এবং শিক্ষাবিদ। আশিটিরও বেশি গ্রন্থের রচয়িতা রান্ডাল সবসময়ই বাক স্বাধীনতার পক্ষে সরব থেকেছেন। নিউইয়র্ক, মেক্সিকো, কিউবা, নিকারাগুয়া এবং আলবুকার্কির মতো জায়গায় জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে। প্রত্যক্ষ অংশ নিয়েছেন বহু আন্দোলনে। মার্কিন বিদেশনীতির বরাবরই কড়া সমালোচনা করেছেন রান্ডাল। মহিলাদের অধিকার, শ্রমিক এবং শরণার্থী-অভিবাসীদের লড়াইতে পাশে থেকেছেন আজীবন। লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প। সদ্য প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'I Never Left Home: Poet, Feminist, Revolutionary'