Tuesday, August 7, 2018


                              প্রচ্ছদ-''রিফিউজিস"
         ..........................................................................
   


কবিতা ক্যানভাস





এনআরসি,আসাম, ২০১৮

                     সপ্তর্ষি বিশ্বাস

এবার তবে গর্জে ওঠো
সিংহ-শাবক
মেষবালকের ছদ্মবেশে
আর কতকাল?
দুয়োরানির নোলক পরে 
কবেই ঘাতক
শান দিয়েছে অন্তরালে
দন্ত করাল।
হায়নারাও আজ কপালে
তিলকমাটি
প্রলেপ দিয়ে ওড়ায় নিশান
জনসভায়
রাজসভাতেও পাঠায় সেলাম
নিয়ম মতো
এবং তোমার বিকল গায়ে
মুহুর্মুহু
আরো গভীর বিষ-চাবুকের
মরণ-ক্ষত।
এবার তবে গর্জে ওঠো
সিংহ-শাবক
ঝর্ণাজলে এবার আপন
মুখটি দেখো,
দেখো তোমায় মেষবালকের
পোশাক দিয়ে
ভুলিয়ে রেখে যক্ষীরানি
আজন্মকাল
নাগড়া বানায় তোমার পিঠের
চামড়া দিয়ে
এবং যে সব হায়না ঘোরে
নাম লিখিয়ে
তোমার পাশে পরম সুহৃদ
মুখটি করে
তারাও যাবে রানির কাছেই
প্রসাদ পেতে
তোমায় ফেলে একলা একা
মরণ ফাঁদে
তাই এবারে গর্জে ওঠো
সিংহ শাবক
ণত্ত্ব ষত্ত্ব নেতার তত্ত্ব
দন্তে ছিঁড়ে
ঝাঁপিয়ে পর যক্ষীরানির
প্রাসাদ ঘিরে।।



দাঁড়িওয়ালা

           দেবাশিস সায়ন


কৃষ্ণকলির ছন্দপতন পাখির মতন
আকাশ ডায়েরি সমুদ্র কলম
লিখছ আজও যখন যেমন—
শমন পাঠায় ওরা, ঘন্টা বাজায় কারা ?
নাম নেই শুধু
তবু দিব্যি বাঁচি
গোত্র নেই জ্ঞাতি নেই
ব্রহ্মার শব্দশুচি ।
রুইতন হরতন চিরেতন কোথায় রে
আকাট বাউণ্ডুলে নাই নাই নাইরে।
ও দাঁড়িওয়ালা বাবু দেশাংশ লিখনি
রেখে গেছ  সাবেকি কল্পনা  —
তবে কেন বার বার পঁচিশে করাও জল্পনা।
এবার নাম দিয়ে যাও ওদের
যারা বাঁচে তোমার ডাকঘরে
চেনা অচেনার তকমা এঁটে খিদের পেটে নিত্য মরে।
দাঁড়িওয়ালা বাবু তোমার নাম আছে কি চিত্রগুপ্তের এনআরসিতে ?
না শুধু বিসর্জনে স্বপ্ন  বাজাও
বাঁচতে শেখাও আরশিতে।












ঘিরে ধরা পথ

              দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম


চারদিক থেকে ঘিরে আসছে পথ
বিনা যুদ্ধে অস্ত্রের ঝনঝনানি
তুমি কে আজ চিহ্নিত করবে নীতি
যা রেখেছো বুকে সব মিথ্যে।

জানালাগুলো নিজেই বন্ধ হচ্ছে
রৌদ্র হাওয়া আর নেই কোথাও
গুমোট এক গন্ধের নিচে দাঁড়িয়ে
কেউ অন্ধকারে লিখছে ত্রিকাল।

যে বলছে অন্যায়, ঘোরতর খুব
আগুন ছুঁয়ে বলছে সে বারবার,
তাকে দেখায় কেমন একা আজ
সদা ঈশ্বরের মতো, যদিও নিরীহ

চারদিক থেকে ঘিরে আসছে পথ
হুঙ্কারে খসে পড়ছে জীর্ণ বাকল
এতোদিন পর তুমি জেনে নিচ্ছো
বৃথা জপেছো বিশ্বস্ততার শপথ


       


        সংলাপ
           

                   নীলাদ্রি ভট্টাচার্য


দৃষ্ট-পৃষ্ঠায় তাকিয়ে আছে শব্দের ছবি
কয়েকটি সিঁড়ি বেয়ে রোজ তার অপরূপ সংলাপ
ভয়শূন্য করে দুটো কথার উপন্যাস।
আমি বিকেলবেলার দ্বন্দ্বী
সন্ধি বাজারে বিক্রি করি
পেট ভরে গিলি জলে ভেজা অভিনয়।
ছায়ার কুঁড়েঘরে কাঁপা মহীরুহ স্নান
সম্পর্কের নীরন্ধ্র অশ্বত্থ শেকড়
বাঁচিয়ে রাখা মানুষের মুখোশধারী হিসেব
দর্শন  আকাশের আজন্ম ঝুলন্ত বাতাস।





                               
                                           ***


-------------------------------------

প্রচ্ছদ -"রিফিউজিস",শিল্পী-কোয়াইস আল-সিন্দি, ছবি (সৌজন্যে ইন্টারনেট)।

লেখা পাঠান- sfulinga.2007@gmail.com 

ব্লগ ঠিকানা- sfulinga.07@blogspot.com 

                           ----------------------------------------------------



                    

Wednesday, August 1, 2018

গল্প 
........



লড়াই

শর্মিলী দেব কানুনগো


কদিন থেকে প্রচন্ড অস্থির শ্যামল বাবু। কি যে হবে.. নাম সব ঠিক ঠাক থাকবে তো? আজ সকালে তড়িঘড়ি ছুটলেন সেবা কেন্দ্রে। নিজের চোখে ছবি সহ সবার নাম দেখে তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল। উফ যা গেল কদিন ধরে। ফেরার পথে হাতে  ইলিশ আর দৈ মিষ্টি নিয়ে বাড়ি এলেন। ভারতীয় হওয়ার আনন্দ উদযাপন। সিঁড়ি থেকে হাঁক দিলেন,
—ক ই গো কোথায় গেলে.. এদিকে এসে নিয়ে যাও এটা। আর জমিয়ে রান্না কর তো আজ...
  বৃদ্ধ বাবা একবার তাকালেন শ্যামলবাবুর দিকে। উচ্ছাসহীন ভাবে।  এসব বড্ড বিরক্ত লাগে শ্যামল বাবুর। এরা যে কি.. আনন্দ কে গ্রহণ করতে যেন অসুবিধা এদের। যাগগে.. ওসব ভেবে লাভ নেই। বরং আজ অনেকদিন পর শান্তিতে খাওয়া যাবে।
    আজ শ্যামল বাবুর বাবা বড্ড অশান্ত হয়ে আছেন। ফোনে খবরাখবর নিচ্ছেন সবার। খেতে বসে বললেন
—বৌমা আজ ইলিশ নামবে না গলা দিয়ে.. আমাকে আর দিও না। হাইলাকান্দির বিরাজের আর হাফিজ দের পরিবার বড় সংকটে। আমি কি করে ভুলি বৌমা... এক অন্ধকার রাতে যখন আমার গাঁয়ে দাঙ্গার আগুন জ্বলছিল, তখন  নামমাত্র দামে জমি জিরাত বিক্রি করতে হয় আসলাম  আলির  কাছে। রাতের অন্ধকারে নাবালক সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে এপারে পালিয়ে আসতে বাধ্য হই। কিন্তু ঐ রাতে আমাকে নদী  পেরোতে সাহায্য করে আসলাম এর পরিবারের লোকেরা। কই ওরা তো সেদিন ইলিশ খেয়ে নিজেদের আনন্দ কে উদযাপন করেনি। ওরা তো সেদিন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছিল আমার কাছে।  এপারে এসে অসহায় অবস্থায় আশ্রয় নিয়েছিলাম পিসতুতো ভাই  বিরাজদের বাড়িতে।যতদিন না কাজকর্ম পেলাম, ওরা ততদিন  হাসিমুখে আমার পরিবারের ভার বহন  করল। জায়গা জমি কিনে থিতু হতে সাহায্য  করল হাফিজ। সম্পর্কে  আসলাম এর পিসির ছেলে। কিন্তু ওরা কেন আমার জন্য এতকিছু করল বৌমা? এতে ওদের কি লাভ হল বল তো?
শ্যামল বাবু  অধোবদন। ইলিশ এর স্বাদ আচমকা চলে গেছে। বাবা বলে চলেছেন...
—বৌমা... জীবনের যখন সুযোগ পাবে নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রমাণ করবে। এতে নিজের কাছে নিজের সম্মান বাড়বে। ছিন্নমূল দের একটাই জাত।প্রজন্মের পর প্রজন্ম ওরা একই পরিচয় বহন করে। ওদের শিকড়ে মাটির বন্ধন থাকে না। ওদের জীবন যেন জলজ উদ্ভিদের জীবন। তাই ওরা প্রশাখা দিয়ে একজন আরেকজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে। আর ঝড় ঝঞ্ঝা বান থেকে বাঁচতে হলে একে  অপরকে আঁকড়ে  ধরে বাঁচা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।কারণ আমরা কেউ জানি না জীবন কখন কাকে কোন দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে।
 
শ্যামল বাবু র গলা দিয়ে নামছে না আর ইলিশ মাছ। মনে পড়ছে সব পুরনো দিনের কথা। হাইলাকান্দির সেইসব প্রতিবেশী মানুষরা কেমন আছেন যারা আপদে বিপদে সব সময় পাশে ছিলেন বিশাল ছায়া দেওয়া  গাছের মত।  কি করে আজ তিনি সব ভুলে গেলেন। বড় লজ্জা করল তার। এতটা অমানুষ  তিনি হতে পারবেন না। এই অস্তিত্বের সংকটময় দিনে এদের পাশে না  দাঁড়ালে যে তিনি  ঋণগ্রস্ত থেকে যাবেন আজীবন। মুখে বললেন,

—কাল আমি একবার  হাইলাকান্দির পুরনো বাড়িতে যাব। কদিন ছুটি নিয়ে ওদের পাশে থাকি  গিয়ে । যতটুকু পারি সাহায্য করব ওদের এই সংকটে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন এর বিবেকহীন কাজ কর্ম  আর অমানবিক স্বার্থপরতার  শিকার  হচ্ছে এক বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী।  এদের পাশে আমি দাঁড়াব বাবা। বাবা বাঁহাতে চোখটা মুছলেন।
 
আজ বাড়ির বেড়ালটার যে কি হলো.. ইলিশ মাছ ছুঁয়ে ও দেখল না।


..........
কবিতা
.........



যাযাবর সন্তান


ভাস্কর জ্যোতি (আলোর জীবাশ্ম)



সদ্যোজাত এক শিশু,
অগ্নি থেকে নৈঋত, নৈঋত থেকে ঈশানে ছুটে যায়।
সে যাযাবর।
সে ঈশ্বর।

নিষাদের অন্তিম অস্ত্র হারিয়ে গেলে,
হলুদ সূর্য লক্ষ্য করা ছুটে চলে,
আরো এক নতুন পৃথিবীর সন্ধানে।
কিন্তু তবুও সে জাতিস্মর।

ভাঙা ছাইয়ের সঙ্গে মিশে গেছে,
হাজার পল্টন প্রহরী।
ভূমিপুত্র রব তোলে।
সোঁদা গন্ধকে আপন করে,
মানুষের সমাধি গড়েছে তাতে।

ভাঙা পাতিলের এক রাশ শব্দের মাঝে,
জোরে চিৎকার দেয় সে শিশু
 "আমি উদ্বাস্তু নই,
আমি যাযাবর,
আমিই ঈশ্বর"


ছবি-ইন্টারনেট



লেখা পাঠান- sfulinga.2007@gmaol.com