Tuesday, March 24, 2020




                             ক রো না  ভা ই রা স



                                প্রতিভা সরকার


প্রকৃতির প্রতিশোধ, মানুষের পাপের ফল এইসব ন্যাকাবোকা কথায় বিশ্বাস নেই। অতো ভাবারও সময় পাইনা, অফিস, বন্ধু, মস্তি আর পাওলি আমার সময় খেয়ে নেয়। আর নেশা এয়ারগানের। টুকটাক মারতেই থাকি। শামুক থেকে কাক। আর বেড়াল কুকুর। কারণ পাওলি ওদের দুচোখে দেখতে পারে না। ভয় পায়, নোংরা বলে আতঙ্কও।


করোনা লকআউটে চারদিক ফাঁকা লাগে। কেউ নেই। সারাদিন আর কাঁহাতক ফোনে কথা আর সিনেমা দেখা। এয়ার গান নিয়ে বারান্দায় দাঁড়াই। দেখি কুকুর বেড়াল ঘোরে ফাঁকা রাস্তায়। মানুষ নেই একটাও। এই সুযোগ। দমাদ্দম গুলি ছুঁড়ি। কোনটার পায়ে লাগে, কোনটার কানে। একটা বেড়ালের কোথায় কিভাবে লেগেছে জানি না, সেটা ডাস্টবিনে কি শুঁকছিল। সেখানেই শুয়ে রইল। ব্যাটা মরে গেল নাকি ?  সবার দরজা জানালা বন্ধ এই বাঁচোয়া। তবু তো নীচের এনিম্যাল লাভার আন্টি সন্দেহের চোখ নিয়ে বেরিয়ে এল। আমায় জরিপ করলে কি হবে, এয়ারগান ততক্ষণ শুইয়ে দিয়েছি বারান্দায়।

হঠাত  সামনের দেবদারু গাছের কাক কলোনীতে কী সাড়া পড়ে গেল। দলে দলে উড়ে এসে চারপাশ অন্ধকার করে দিল। কেউ রেলিং ছুঁয়ে ডানা ঝাপটায়, কেউ আমার মাথার ওপর ঘুরে যায়। একটা তো দারুণ জোরে ঠুকরে দিল। আমি গুলি ছোঁড়ার চান্সই পাচ্ছি না, এতো কাক একসঙ্গে।


দড়াম করে দরজা বন্ধ করেই পাওলিকে ভিডিও কল লাগালাম। সে হেসে গড়িয়ে পড়ে,

-  ওকি তোমার কাঁধের ওপর, মাথার পেছনে সবুজ রঙের স্পাইক কেনো। গোল মুখ, ঠিক যেন করোনা ভাইরাস একটি।

সে হাসতেই থাকে। জিজ্ঞাসা করতে ভুলে যায় আমি এতো হাঁপাচ্ছি কেন।

আমি সভয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াই। দেখি সবুজ দেবদারু পাতা কাঁধে, একটি মাথার ওপরে। কলারে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর একটি। আমার গোল মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।
সত্যিই নিজেকে দেখায় যেন স্পাইকওয়ালা একটি জ্যান্ত করোনা ভাইরাস।











প্রতিভা সরকার
 অধ্যাপিকা, সমাজকর্মী ও লেখক
কলকাতা