Thursday, July 26, 2018

  খো  লা  ক  ল  ম

----------------------------------

                         

                            'নাম আছে?'

                       

                            রম্যাণি চক্রবর্তী 


বছর ছয়েক আগের কথা হবে। সময়টা বৈশাখের ধারে কাছে। স্থান এন.আই.টি শিলচর। চার দিক ঘেরা সেই জায়গায় উদযাপিত হচ্ছে 'পোসোআ', আসন্ন নববর্ষ উপলক্ষে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক নাম। সেখানে দেখলাম শহিদ বেদি। সেখানে দেখলাম 'জয় আই আহোম' লেখা গামোছা উত্তোলন। সেখানেই দেখলাম সবাই দাঁড়িয়ে উঠে একটা গান গাইল। 'আমার অহমর জাতীয় সঙ্গীত', পাশের মেয়েটা ফিসফিস করে জানিয়ে দিয়েছিলো। বিহুর উৎসব আগেও দেখেছি। অপরূপ ছন্দের গান আর তার সাথে তাল মিলিয়ে নাচ। মুগা রঙের সুতো আর 'পেঁপা' তে যেন আনন্দ উপচে পরে। কিন্তু সেবারে একটু খচখচ করছিল। শহিদ বেদি আর হাওয়ায় উড়তে থাকা গামোছার আড়াল থেকে যেন উঁকি মারছিলো আসাম আন্দোলন, নেলী, ৬১, ৮৫। নববর্ষের আগ মুহূর্তে সেটাই অসমীয়া জাতীয়তাবাদের সাথে প্রথম পরিচয়।

২০১৭ সাল।  ৩১ ডিসেম্বর যখন পৃথিবীর সবাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নতুন বছরের অপেক্ষা করছে, তখন আসামের, বিশেষত বাঙালিরা, ব্যস্ত ছিল হাজেলা বাবুর জাবদা খাতায় নিজেদের আসাম বাসের বৈধতা খুঁজতে। এর আগেই কিন্তু মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে গেছিল। দুলু শব্দকর কে মনে পড়ছে? ২০১৫ সালে তাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই মারা গেছিলেন। তারপর আরো অনেকে। হানিফ খান, রতন রায়, সুব্রত দে, সহিমুন বিবি, কিছু নাম পাওয়া গেছে , বেশির ভাগ নামই পাওয়া যায়নি, পাওয়া যায় না। এদের কেউ কিন্তু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক নয়। এদের কাছে অর্থ বা শিক্ষার বর্ম নেই। এদের কাছে জমির পাট্টা থাকে না, মাধ্যমিকের মার্কশিট থাকে না। আর খুব বয়স্ক হলে তো জন্মের সার্টিফিকেট ও থাকে না। যাদের রোজ রাতে শুয়ে পরের দিন হাঁড়ি চড়বে কিনা ভাবতে হয়, তাদের পক্ষে তো উকিল নিয়ে ট্রাইবুনালে মামলা লড়ার ক্ষমতা থাকে না! দিন মজুর দুলু বাবু তো ভাবতেই পারেননি যে একজন ভিখিরী-সম দিনমজুর কে পুলিশ এসে তুলে নিয়ে যেতে পারে!তাও সেটা হয়েছে!

গত নির্বাচনের সময় আমাদের রাজামশাই অসম গণপরিষদের সাথে জোট এবং ডিটেনশন ক্যাম্প ভাঙার প্রতিশ্রুতি দুটোই একসাথে করেছিলেন। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। পদ্মফুলে ছাপ দিয়ে সবাই নিশ্চিন্ত হয়ে বসেছিল, ' হউ বাঙাল হকল মরবো। যাউক শত্রু পরে পরে।' তেলের ঝাঁজে খেয়াল ছিল না যে অসমীয়া উগ্র জাতীয়তাবাদের কাছে বাংলায় কথা বললেই 'কেলা বঙ্গাল', সে কিন্তু তখন বাবন-যবন ভেদ করে না! তারপর যখন তেলের খেমতা ফুরোলো, ঘুম ভেঙে দেখা গেলো যে হাতে রইল পেন্সিল! বাদল অধিবেশনে বিরাট হিন্দু যুগপুরুষ  অ্যান্ড কোং কিন্তু নাগরিকত্ব বিল পেশ করছেন না। সাদা কাগজে নামের লিস্টি পৌঁছে যাচ্ছে নানা জায়গায়। লক্ষাধিক নাম বাদ পড়বে।

আর তারপর আমরা সবাই হয়তো দেখবো একদিন যে আমাদের এখানেও 'auschwitz' তৈরি হচ্ছে। গোয়ালপাড়ায় স্থায়ী ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির খবর বেরিয়েছে। ডিটেনশন ক্যাম্প এবং কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে খুব বেশি তফাৎ পাওয়া যাবে কি ? বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র তৈরি করবে হয়তো বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রহীনের দল। 'জাতি-মাটি-ভেটির' আস্ফালন কি আদৌ প্রাণে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও দেবে?

তাই আমাদের কাছে আজ সবথেকে ভয়ের প্রশ্ন -            'নাম আছে?'
                                    ###          



                        ..................
                              ।। কবিতা।। 
                                      ...............

সময়

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

লুটেরা কেড়ে নিচ্ছে আত্মসময়
সমাহিত আলোর পাটাতনে রংবাজ
গিয়ার বদলে হেঁটে চলছে
বিস্ময় বালিকার ছায়া...

অন্ধকূপ ছুঁয়ে নেমে আসে
বোহেমিয়ান চিৎকার...
             
                                     ***



ছবি-ইন্টারনেট