Monday, February 12, 2018

ক্যানভাস ৪

গল্প 

 সুবলের মা

শর্মিলী দেব কানুনগো 

  সকাল হতেই গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে সরলা। সুবলের বৌ। শাশুড়ির গুষ্ঠি উদ্ধার করছে। বুড়ি শাশুড়ি দাওয়ার ঘরে শুয়ে আছে। বড় অভিমান হচ্ছে বুড়ির, পেটের ছেলের উপর। এত কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছে। সে ছেলে কি না বৌ এর কথায় উঠে বসে। কেন রে তুই যখন কাঁথা ভেজাতি তখন কি তোর মা পাড়া মাথায় করত? আজকাল সুবলের মা রাতে ঠাহর পায় না। কাঁথা ভিজায়। শরীর বড় দুর্বল। তাই পুকুর ঘাটে কাঁথা নিয়ে ধোয়ার ক্ষমতা নেই। ছেলেটা ফিরেও তাকায় না। অগত্যা বৌ ভরসা। আর বৌ কখনও শাশুড়িকে সুনজরে দেখেনি। তাই বড্ড বিরক্ত হয়ে বুড়ির মৃত্যু কামনা করে। বুড়ি কাঁদে। বুকটা পোড়ে। 
বৌটাকে ছেলে যখন নিজে বিয়ে করে এনেছিল তখন বুড়ি আদর করে ঘরে তুলেছিল। মেয়ের মত আদর করে নিজের পাত থেকে ভালো কিছু হলে বৌয়ের পাতে তুলে দিত। বৌয়ের বাপ ভাইরা কখনও ওকে আর ঘরে তুলেনি। বৌটা মার জন্য কাঁদত। বুড়ি বৌকে বুকে ধরত। চোখ মুছে দিত। 
     এখন সুবলের মা আর ঠিকে কাজ করতে পারে না। ছেলের উপর খায়। তাই সংসারের বোঝা। সারাদিন ছেলেটা বৌটা কথা শুনায়। বুড়ি নিজের মৃত্যু কামনা করে। 
  আবার কি মনে করে বৌকে বলে, 
—ও বৌ দোহাই তোর এতজোরে চেঁচাস না। আমার সুবলের কাঁচা ঘুম ভেঙে যাবে যে। 
বৌ এসব কানেও তোলে না। সমানে গালাগাল দেয় বুড়িকে। 
 সুবল উঠে আসে। বৌ এর কষ্টে সুবল দুঃখ পায়। মা কে দোষারোপ করে। বুড়ি নাকি বৌকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ইচ্ছা করেই বিছানা ভিজিয়ে দেয়। পেটের ছেলের কথায় বড় কষ্ট পায় সুবলের মা। নীরবে কাঁদে। এই ছেলেকে কোলের রেখে বাপ মরেছিল। বুড়ি পরের বাড়ি গতর খাটিয়ে একে দু বেলা দুমুঠো খাইয়েছে, বাঁচিয়ে রেখেছে। দুই অক্ষর পড়িয়েছে। বাবুদের বাড়ি থেকে অগ্রিম টাকা চেয়ে এনে দোকান দিয়ে বসিয়েছে। সেই দোকানের আয় নেহাত মন্দ নয়। আজ মার বুঝি ছেলের কাছে কিছুই প্রাপ্য নেই! সুবলের মা গভীর শ্বাস ফেলে কপালে হাত ছোঁয়ায়। কাকে যেন বলে, 
—ভালো রাখ ঠাকুর, আমার সুবলকে ভালো রাখ। 
  সুবলের বৌ কাঁদছে। ওর বাপের বাড়ির গাঁএর একজন এসেছিল আজ। বৌএর মার অবস্থা ভাল না। ছেলে আর বৌ বড় কষ্ট দেয়।ওষুধ পথ্য ছাড়া দিন কাটছে বৌএর মার। 
সুবলের মার বুকটা পোড়ে। কোনও রকমে উঠে আসে বিছানা ছেড়ে। সুবলের বৌ শাশুড়ির বুকে মাথা রেখে কাঁদে, আগের মত। আজ বুঝি বৌ এর বুকটা পোড়ে। বুড়ি চোখ মুছে দেয়। সুবলের মা যে মা।


কবিতা



সময়সরণি
---------------
রাজেশ শর্মা


প্রত্যাশার দুরত্ব থাকে 

বুঝেছি সকল

কবোষ্ণ

ছুঁতে গিয়ে সমস্ত 
স্পর্শে 

নিয়নকুসুম!


খানিকটা বেশি
--------------------
 দ্বৈপায়ণ নায়ার


বড় হচ্ছে সে, তার পৃথিবী
যা বরাবরই আমার চোখের শেষ নীল
মেঘেরা শুধু দিচ্ছে ছোয়া 
সাদা ধনেশটাই যেন হাতে গোনা স্বপ্ন ।

শুধু প্রেমিকা এর জন্যেই 
কি তাহলে পৃথিবীটা ফোঁটা, অচেনা
গুণীরা রাজি হবে, বিজ্ঞানীরাও হবে ।

তুমি তো ভাবনার চেয়ে সবসময়
খানিকটা বেশি
তাই তো বলে, 'চোখে হারিয়ে যাওয়া' ।

কিন্তু হারালে 
নিজেকে পাওয়া যায় ঠিক;

ফেরা যায় ?

গতিক
----------

দেবজ্যোতি পুরকায়স্থ 

বড় আনন্দে আছি
      প্রশ্নচিহ্নে প্রতিপদ ছেড়ে 
স্বপ্নকে সংগী করে 
     আশা নিত্য সহচরী 
বড় আনন্দে আছে

*লিমেরিক*


 ।।  এম রিয়াজুল আজহার লস্কর ।।

ভাংলো হাতি কাঠের সেতু যেই না দিলো গুঁতা,
দুষ্টু হাতি বাঁধতে হবে আনছি দাঁড়া সুতা,
মানুষ এসে ডাঙ্গায়
চোখটা বড় রাঙ্গায়
দুষ্টু হাতি তোমার গলায় বাঁধতে হবে জুতা ! 



*লিমেরিক*
  
 ।।  এম রিয়াজুল আজহার লস্কর ।।

কথা বলেন মানুষেরি, কবি তিনি বাম্পার ! 
বাপের পকেট চুরি করে কিনেছিলেন ডাম্পার,
ব্যবসাতে হোন ব্যর্থ
দুঃখ পেলেন ঢের, তো ;-
রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন ! যাবেন হয়ে ট্রাম্প আর!!

স ম্পা দ ক
------------
বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য
৯৪৩৫৬১৫২৫৯
im.biswaraj@gmail

অলংকরণ - ইন্টারনেট