Wednesday, February 14, 2018

ভালবাসার ক্যানভাস



নিরক্ষরেখা

রুমেলা দাস
---------------
আমি আর বিচ্ছেদ,
আজ একই চাদরের তলায়
ফিনফিনে ভালোবাসা।
রঙিন গোলাপ মেখে অতীত সেজেছে অষ্টাদশী
শিথিল হিল্লোল মাড়িয়ে যাচ্ছে
প্রেমকাতর তীর।
কাম, লোভ বড় তুচ্ছ
হিয়াতেই প্রতিপদের প্রবেশ
বিচিত্র এ কপাটে চুমু দিয়ে যায়
শাপ প্রবণ কোনো বিরহীর মতো,
প্রতিপ্রশ্ন তৈরি রেখো তুমি
এ জীবনের মন্থর প্রহর কাটিয়ে
আরো একবার
আরো কোনো সন্ধ্যায়
দু চুমুক একসাথে স্পর্শ করবো
হিমবাহ ক্যানভাসে।।




অধরা শব্দের মাপ...

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 
---------------------
আমি আটকে রেখেছি বোকার মতো এক অধরা পাগল নিগূঢ় আলাপ |
ভাতের দানায় অবলম্বন তোমার হাতের গন্ধ,
রোজ রোজ চোখের কালো নির্জন ঘরে 
আমার ভিক্ষান্নের ক্ষুধা বসন্ত বাতাস,শব্দের মাপা দুমাত্রার কৌতূহলী  আবেশে আমিত্বের দাগ মুছে রাখে।



প্রেম 

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম
--------------------------------
(ক) 
যেন তুমি অজ্ঞাতসারে অন্ধকারকে দিলে শেষ প্রহরের জ্যোৎস্না
ছড়ালে চাঁদের মায়া, মায়াবী পরশ শাদা চাদরে বোনা।
বুকের গভীরে রাখলে হাত, নির্ঘুম স্বপ্নের ফর্দ করে কেটে গেল -
আমার গাণিতিক যোগের অধিক শত সহস্র এক রৈখিক রাত।
যেন তুমি নিজেই প্রেম, দিক বিদ্বিক ফেরা অস্থিরতার ষোলকলা
ঐকান্তিক এ ভুবন জুড়ে খেলছো হৃদয়, চক্রাকারে সারাবেলা।
(খ) 
তোমার চোখ অতীত বিস্ময়
অনতিদূরের মাস্তুল,
বিষণ্ণ ভ্রমণ শেষে ঘরময় ডাক
জ্ঞাতসারে আরেকটি ভুল।


আজগুবি প্রেম

দেবাশিস চক্রবর্তী সায়ন
------------------------------
বল না রে মেয়ে অমন করে দেখলি কেন আমার দিকে ডাগর চোখে?
জানিসই তো আমায় নিয়ে মন্দ কত বলে লোকে।
বলুক ওরা,মুখ আছে তো, বকেই যাবে,
ক জন নাহয় মুখ ফিরাবে,
তাই বলে কি রাখব না চোখ,
বাঁকা কথা বলুক না লোক,
আমার হৃদয় জামিন রাখি তোর দুহাতে গ্রেফতারিতে...
সওয়ালটা বেশ জোরেই করিস যাবজ্জীবন সাজা দিতে।
হিসাব কষে হৃদয় দেওয়া সেটাই এখন চলতি ফ্যাসন
বুদ্ধিমানে প্রেমের সাথে বুদ্ধি করেই লাভটা পেশন।
কিন্তু আমার আজগুবি প্রেম, রিমেক তো নয় ডাবিং করা,
পুরোনো ছাঁচ জলাঞ্জলি, মনের থেকে মুর্তি গড়া।
এই তো নিলাম হিসাবখাতা,আঁক কেটেছি সারা পাতা, সেসবও ভুল।
মন জুড়ে তোর পিঠ ছাওয়া চুলরাতের মত গহীন কালো,
ওইখানে তো অনেক আগে,লাগামছাড়া অনুরাগে আমার হৃদয় পথ হারালোও
 মেয়ে তোর বাঁকা। 
 ভুরু, ঠোঁটে হাল্কা হাসির রেখা,দিনদুপুরে খুন করে যায়, শরীর জুড়ে পদ্য লেখা।
পারলে পরে যা পালিয়ে, আমার থেকে অনেক দূরে
বিরহে তোর আগুন আঁচে যাকনা আমার বুকটা পুড়ে।
সেই আগুনের বহ্ণিশিখা, আমার, শুধু আমার থাকুক,
হিসাববিহীন ভালবাসায় আজগুবিকে বাঁচিয়ে রাখুক।
চলতি হাওয়ার পন্থী হয়ে বাকি সবাই যাক ওদিকে 
আমার হাঁটা উল্টো পথে, বলেই রাখি জনান্তিকে।
হিসাব টিসাব নেই সে পথে, পদে পদে ঠোকর খাবি,
আজগুবি প্রেম সামাল দিতে , বল না রে মেয়ে, সঙ্গে যাবি?


অবোধ

দেবজ্যোতি পুরকায়স্থ
---------------------------
ভালবাসা কি সত্যি এরূপ হয়
যে মনে শোনে মনে কয়!
কি করে যে বোঝাই বুঝি তার
ভালবাসা বুঝি এমন করে;
জানি না ভালবাসা শব্দের মনভাব
তবু ভালবাসি এমন স্বভাব



সর্ণিমা ও আমার ছেঁড়া স্বপ্নের ছাই

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
-------------------------
ভালো হতে চাই না
মার চোখে আমি কীটনাশক
আর বাবার চোখে
শতাব্দীর অভিশাপ ।
মগজ আজ উদ্মাদ
বুকের নিলয়ে পরিয়ায়ী অগ্নিকুণ্ড ।
অকালপক্ক ভালোবাসার ফুল
শরীর চেটে নিচ্ছে
বর্ষার অহংকার ।
জানো সর্ণিমা
তখন এম এ
ডান হাতে অফিসের ঝাড়ু
বাম হাতে রবীন্দ্র রচনাবলী
মনে প্রেমের বীজ
আর সারা দিনের উপোসি ঠোঁটে
বিট লবণের লিকার চা
আস্বাদ নেই
আমি তো জানি কপালে
ভগবানের রম্য হাসি
কোনো অভিযোগ নয়
আজ গাছের ডালে ডালে লেগে রয়েছে
আমার ছেঁড়া স্বপ্নের ছাই
সর্ণিমা তোমার শীত ঘুমে
আমার সহস্র কাঁপুনি চুমু
শরীর আর চেতনায়
ক্ষত আদিম বিষ দাঁতের
তখন আমি কবিতা,শব্দের ভরাট যুবক
একনায়কতন্ত্র সংসারে থু থু ছিটিয়েছি
অপবিত্র প্রতিটি সুখে ।
সর্ণিমা বিশ্ববিদ্যালয় করিডোরে
তখন তুমি এক টুকরো রোদ
সম্পর্কের অভিমানে আমি
বালিশের সহবাস
কেহ জানে না , কেহ জানবে না
আজো আমি পবিত্র অক্ষরে বুনি
সংবাদপত্রের ঘুশখুর মালিকের চোখ
আমি লেখক, আমি সম্পাদক, আমি ক্রোধ
ডিনারের শেষে রাত্রির
অসময়ের যন্ত্রণা
ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি !
আজ রক্তে জাদুকরী মন্ত্র
নষ্ট গলির গল্প
আর গালে কিশোরীর নরম স্তন
সরনিমা তোমার শ্বাসাঘাত চুলে
জেগেছিল রাতের হাওয়া
নিশ্বাসে ছিল মুক্ত ছন্দ
ঝাঁপসা  জ্যোৎস্নায় শ্মশানের চিতায়
ফাটছে আমার অস্থি
গলে পড়ছে দৃষ্টি
বিশ্বাস করো আমি বেঁচে আছি
হাঁ বেঁচে আছি
ছদ্মরঙ নিয়ে চাঁদ গলায়
ঝাপসা জলদাগ হয়ে বেঁচে আছি ।


সম্পাদক
বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য
লেখা পাঠান- im.biswaraj@gmail.com
ছবি: ইন্টারনেট